জেমস রহিম রানা
আজ শুভ বড়দিন। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও আজ সাড়ম্বরে ও উৎসবমুখর পরিবেশে দিবসটি উদ্যাপন করবে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা। বড়দিন খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। দুই হাজার বছরেরও বেশি সময় আগে এই দিনে খ্রিস্ট ধর্মের প্রবর্তক মহামানব যিশু জেরুজালেমের কাছে বেথেলহেমের এক গোয়ালঘরে জন্ম নিয়েছিলেন। হিংসা-বিদ্বেষ, অন্যায়-অত্যাচার ও পাপাচারে নিমজ্জিত মানুষকে সুপথে আনার জন্যই যিশু আবির্ভূত হয়েছিলেন। যিশুর জন্মদিন তাই শুধু খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের জন্য নয়, সারা মানবজাতির জন্যই একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। বড়দিনের কর্মসূচি শুধু আনন্দ-উৎসবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, যিশুর শান্তির বাণীও ছড়িয়ে দেওয়া হবে মানুষের মধ্যে। তাই বড়দিন শুধু একটি উৎসবই নয়, সৌহার্দ্যের উদাহরণ সৃষ্টি করার দিন।
যিশুখ্রিস্ট সারা জীবন আর্তমানবতার সেবা, ত্যাগ ও শান্তির আদর্শ প্রচার করে গেছেন। হিংসা-দ্বেষ ভুলে তিনি সবাইকে শান্তি, সম্প্রীতি ও মানবতার বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। খ্রিস্টীয় মতে, যিশু ঈশ্বরের পুত্র এবং জগতের সব মানুষের ত্রাণকর্তা। শাসকের অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে তিনি শোষিত, বঞ্চিত ও নির্যাতিত মানুষের পক্ষ নিয়েছিলেন। এ কারণে তিনি ওই সময়ের শাসকের নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন এবং মাত্র ৩৩ বছর বয়সে তাঁকে ক্রুশবিদ্ধ হয়ে জীবন দিতে হয়েছিল।
যিশুখ্রিস্ট পথভ্রষ্ট ব্যক্তিদের দেখিয়েছেন আলোকিত পথ। তিনি বঞ্চিত-লাঞ্ছিত মানুষকে দিয়েছেন বাঁচার অনুপ্রেরণা। মানবজাতিকে পাপ-পঙ্কিলতা থেকে তিনি ফেরাতে চেয়েছিলেন মমতা, ভালোবাসা ও ক্ষমাশীলতার পথে। মানবসেবার অন্যতম আদর্শ তিনি। যিশুর পথ ছিল সংযম, সহিষ্ণুতা ও ভালোবাসার। মানুষের নৈতিক দৈন্যের কারণে সারা বিশ্বে আজ হিংসা, হানাহানি ও অশান্তি বেড়েই চলেছে। বড়দিনের বাণী এই দৈন্য ও সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে ওঠার জন্য।
প্রতিটি ধর্মেরই মূল বাণী হলো মানবতাবোধ। বড়দিন উপলক্ষে যে প্রেম ও আশার বাণী প্রচার করা হয়, তারও মূলে রয়েছে মানবতা। অথচ সেই মানবতাই আজ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে ধর্মের অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্যকে হৃদয়ে ধারণ না করেই কিছু মানুষ ধর্মের নামে হিংসা ছড়ায়। সে কারণেই একবিংশ শতকে এসেও দেশে দেশে সাম্প্রদায়িক সংঘাত দেখা যায়। মানুষ নিষ্ঠুরতার শিকার হয়। বড়দিন প্রত্যেক মানুষকে শান্তি, প্রেম ও সম্প্রীতির শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করুক—এটাই সবার কাম্য। পৃথিবী থেকে বিদায় নিক হিংসা, সাম্প্রদায়িকতা ও বর্ণবাদের মতো নিকৃষ্ট সব চিন্তাধারা।
এদিকে বড়দিন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। তারা এতে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষকে শুভেচ্ছা জানান।
বড়দিন উপলক্ষে আজ যিশুভক্তরা নানা আয়োজন করেছে। ঘরে ঘরে জ্বালানো হয়েছে রঙিন আলো, ক্রিসমাস ট্রি সাজানো হয়েছে। নানা ধর্মীয় আচারে পালিত হবে দিনটি। গির্জাগুলো সাজানো হয়েছে রঙিন বাতিতে। যিশু গোয়ালঘরে জন্মেছিলেন বলে তার অনুসারীরা ঘরে ঘরে প্রতীকী গোশালা তৈরি করেছে।
সকালে গির্জায় বিশেষ প্রার্থনা দিয়ে দিনের শুরু হবে আজ। তবে যশোরের ক্যাথলিক গির্জা, শিমুলিয়া ক্যাথলিক গির্জাসহ বেশকিছু গির্জা এদিনই রাত ১২টা ১ মিনিটে বিশেষ প্রার্থনার মাধ্যমে দিনের অনুষ্ঠান শুরু করবে। এ উপলক্ষ্যে প্রায় সব পরিবারেই থাকে কেক, পিঠা, পোলাও-বিরিয়ানিসহ বিভিন্ন সুস্বাদু ও উন্নত মানের খাবারের আয়োজন। সবচেয়ে বড় উৎসব হওয়ায় পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয় মেলবন্ধনও ঘটে এদিন। গির্জায় ধর্মীয় গান হবে। সান্তাক্লজ শিশুদের দেবে নানা উপহার। অনেকে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার জন্য বড়দিনকে বেছে নেন। বাংলাদেশের অভিজাত হোটেলগুলোতেও ছুঁয়ে যায় বড়দিনের উৎসবের আনন্দ। উৎসব ঘিরে আনন্দমুখর আয়োজনের ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলোর অভিজাত তারকাবহুল হোটেলগুলো। রঙিন বাতি, ফুল আর প্রতীকী ক্রিসমাস ট্রিতে সাজানো হয়েছে বড়দিন। দিবসটি উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটির দিন। সংবাদপত্রগুলো দিনটিতে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ বেতার, সরকারি-বেসরকারি টিভি ও রেডিওতে যিশুখ্রিষ্টের জীবন ও কর্ম নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র সম্প্রচারসহ দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বিভিন্ন অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হবে।
এদিকে, এ পবিত্র উৎসবের দিনে সকল খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন, যশোর ক্যাথলিক চার্চের ফাদার মৃত্যৃঞ্জয় দফাদার, খ্রিস্টান এসোসিয়েশন বাংলাদেশ ক্যাব এর কেন্দ্রীয় প্রধান উপদেষ্টা যোষেফ সুধীন মন্ডল, মহাসচিব উইলিয়াম প্রলয় সমাদ্দার বাপী ও নির্বাহী সদস্য জেমস আব্দুর রহিম রানাসহ কেন্দ্রীয় ও জেলা কমিটির সকল নেতৃবৃন্দ।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার : বড়দিনের উৎসব নির্বিঘ্ন করতে সর্বোচ্চ পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন যশোরের জেলা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, বড়দিন উপলক্ষে সুনির্দিষ্ট কোনো হুমকি নেই। এর পরও কোনো কিছুকে ছোট করে দেখা হচ্ছে না। খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব বড়দিন ঘিরে প্রতিটি চার্চের আশপাশে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছে। খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত এলাকায় তিন দিন ধরে পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এবং বড়দিনের সকাল থেকেই আইন শৃংখলা বাহিনী গির্জার অভ্যন্তরে সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিতে দায়িত্ব পালন করবে।
বাংলাদেশে বড়দিনের উৎসব শুধু শহরেই অনুষ্ঠিত হয় না, বরং তা শহরের বাইরে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত গ্রামগঞ্জেও খুবই আবেগঘন ও আনন্দময় পরিবেশে উদ্যাপিত হয়। যশোর শহর ও জেলার ভিভিন্ন উপজেলাতেও এ উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হবে। এছাড়া এদিন বেলা ২টা ৩০ মিনিটে বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বেসরকারি টেলিভিশন বৈশাখী টিভিতে প্রচারিত হবে যিশুখ্রিষ্টের জীবন ভিত্তিক প্রামাণ্য চিত্র।
আজ এ পবিত্র উৎসবের দিনে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের প্রতি রইল আমাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। এ উৎসব সবার জন্য আনন্দময় হয়ে উঠুক। ভালোবাসার বিস্তার ঘটাক সবার মনে। ফিরে আসুক শান্তি ও সম্প্রীতির সু
Leave a Reply