সেদিন হঠাৎ ফেসবুকে ছবি গুলো দেখে ভালো লেগে গেলো । ভাবলাম যাওয়া যায় স্বপ্নবিলাস ট্যুরিজম এর সাথে। আরিফের সাথে কথা বল্লাম আমাকে যাওয়ার জন্য বললো। প্যাকেজ মুল্য ছিল ঢাকা থেকে ৬৫০০ টাকা ৪ রাত ৩ দিনের জন্য। বিকাশে টাকা দিয়ে ভাবনায় ছিলাম কেমন হবে গ্রুপের অন্যান্যরা । এই টুরটি ছিল ১৬ ই ডিসেম্বর উপলক্ষে বুধবার রাতে সায়দাবাদ থেকে রাত ৯ টার সময়। আমি খুলনা থেকে ১৫ তারিখে ভোর ছয় টার সময় বের হয়ে পড়ে ছিলাম। সায়দাবাদ পৌঁছাতে সময় লেগেছিল প্রায় ৫ ঘন্টা। হাতে সময় ছিল অনেক তাই চকরিয়া পর্যন্ত কক্সবাজারের গাড়িতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলাম। টিকিট ও পেয়ে গেলাম দুপুর ১২ টা ৪০ মিনিটে গাড়ি চলতে শুরু করল চকরিয়া পৌছাতে সময় লাগছিলো প্রায় ১১ ঘন্টা । চকরিয়া রাতে থেকে ভোরে টিমের সদস্যদের সাথে যোগ দিলাম সকাল ৮ টার সময়। চাঁদের গাড়িতে করে রওনা হলাম সবাই মিলে টিমের সদস্যরা মোট ৪৪ জন গাড়ী ৪ টি। সবাই কে দেখে নিজেকে আর একা মনে হচ্ছে না তখন । সবাই খুব আন্তরিকতার সহিত আলাপ করতে করতে পরিচয় পর্ব সেরে নিলাম গাড়িতে। আলিকদম যাত্রা বিরতি তে সকালের নাস্তা সেরে দুপুরের খাবার নিয়ে আবার যাত্রা শুরু হয়। ইতিমধ্যে আলিকদম পার হচ্ছি আর উপরের দিকে উঠছি আর দুই পাশের প্রকৃতির মাঝে সবুজের বুকে যানি মিশে যাচ্ছি। আলিকদম টু থানচি এটি আমাদের বাংলাদেশের সবচেয়ে উচু রাস্তা। আর রাস্তার দুপাশে এক এক সময়ে এক এক রকমের দৃশ্য দেখে আমি যানি বার বার প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাচ্ছিলাম। যেতে যেতে কখন যানি মোবাইলের নেটওয়ার্ক চলে গেছে বুঝতে পারি নাই। হঠাৎ একজন বলে উঠলো আমরা যেখানে যাচ্ছি নেটওয়ার্কের বাহিরে সবাই বাড়িতে কথা বলে নিয়েন। কিন্তু কি আর করা আমার মোবাইলের নেটওয়ার্ক চলে যাওয়াতে আমি আর কথা বলতে পারি নাই। চকরিয়া থেকে থানচি যাইতে চেকপোষ্টোটের ৪ জায়গাতে আইডি কার্ডের ফটোকপি দেওয়া লাগে । আর এই বিরতিতে আমি সহ সবাই গাড়ী থেকে নেমে নেমে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছিলাম। ইতিমধ্যে সবাই জোরে চিৎকার করতে লাগলো ভাই সামনে ডিম পাহাড়। সবাই কে নামিয়ে পাহাড় আর চার পাশের প্রকৃতির সৌন্দর্যের প্রতিরূপ দেখার জন্যে সময় দেওয়া হলো। ডিম পাহাড়ের কাছেই দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষ করে আবার চললাম থানচির দিকে। আহ কি বলবো এমন অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ হয়তো বা আর কথাও করেনি আমি। কিছুক্ষণ পরেই আমরা থানচি পৌছাতে আমাদের গাইডরা চলে আসলো, (ভাই আপনাদের এতক্ষণ লাগলো কেন যেতে তো রাত হয়ে যাবে ) গাইড প্রকাশ বললো। ততক্ষণে ঘড়িতে দুপুর ২ টা বাজে । থানচি এষ্টান্ডে বসে দুইটি ফরম পুরন করার জন্যে গাইড বললো সবার বাড়ির ঠিকানা সহ বাড়ীর নাম্বার লিখে দেন। পরে আমাদের সবাইকে নিয়ে থানচি থানায় নিয়ে রিপোর্ট করে ছবি দিয়ে গাইড প্রকাশ রওনা হলো। এবার পালা সেই সাঙ্গু নদীর বুকে চলার পালা সবাই নামতে থাকলাম বোড ছাড়ার এস্থানেই । বেশ নিচু নামতে নামতে ঠিক করতে লাগলাম কে কে থাকবো একসাথে। আমার সাথে থাকার জন্যে ৮,১০ জন বললো কিন্তু কি আর করা বোডে ৫ জনের বেশী যাত্রী বসা যাবে না।
সাঙ্গু নদী :
সত্যই অপরূপ সৌন্দর্যের প্রতিরূপ আমার চোখে ধাধা লেগে যাচ্ছিলো । নদীর তীরে যখন নামছি বোডে উঠার জন্য চারিদিকে তাকিয়ে দিশেহারা হয়ে গেছি। কি করবো ভাবছি একজন টেনে ধরে আমাকে বললো আহেন ভাই আমারা একসাথে যাই। বোড চলতে শুরু করল আর চারি দিকে তাকিয়ে দেখি শুধু সুন্দরী স্বর্গীয় মোড়কে আঁকা উঁচু নিচু অগণিত পাহাড়। বোড চলছে দুরন্ত গতিতে সামনে একজন সহকারী ১৫থেকে ১৮ ফুটের বাঁশ নিয়ে বসা পিছে চালোক ড্রাইভ করছে। বুঝে উঠার আগেই জিজ্ঞেস করলাম ভাই বাঁশ কি হবে বললো শুধু দেখে যান। আমি ভিডিও করতে লাগলাম ছবি উঠাতে ব্যস্ত হয়ে পরেছিলাম । হঠাৎ দেখি সামনে বড় বড় পাথর কাছে যেতেই সামনে বাঁশ দিয়ে ঠেক দিয়ে দিয়ে চলছে। বোড টাও আমাদের এলাকার চেয়ে আলাদা ধরনের গতিটাও খুবই স্পিরিট। দূরের আকাশ আর পাহাড়ের চূড়া সাঙ্গুর নদীর স্রোতের বিপরীতে পানির এক অনন্য অসাধারণ মিল যেনো আমার চোখ জুড়িয়ে দিচ্ছিল। ভাবছি জীবনে শুধু ছবিই দেখেছি বাস্তবে এতো সুন্দর ভাবতে পারি নাই। কিছুক্ষণ পর পর দুই পাশের প্রকৃতির সৌন্দর্যের যে ধরা কি বলবো ভাষা হারিয়ে গিয়েছিল। হঠাৎ করে সূর্য পাহাড়ের ওপাশে পড়ে তখন এপাশের পাহাড় ছায়া ঘেরা অদৃশ্য দেয়াল। কিছুক্ষণ পর আবার সূর্য মামা উকি মেরে যেনো বলছিল আমাদের কে আমি আছি তোমাদের সাথে। আমাদের রেমাক্রির পথে যাওয়ার কথা থাকলেও সময় সল্পতার কারনে পদ্দঝিরি হয়ে যেতে হবে এই পরিকল্পনা মাফিক কাজ হলো। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে কখন যে পদ্দঝিরি পৌছালো বুঝে উঠতে পারলাম না। সময় তখন বিকাল ৪ টা গাইড বললো তাড়া তাড়ি যেতে হবে অনেক রাত হবে। আমরা গোছাতে থাকলাম পায়ের এঙ্গলেট পরলাম আর ১০ টাকা দিয়ে একটা বাঁশ নিলাম প্যান্ট হাটুর উপরে গুছাইলাম।
পদ্দঝিরির ভয়ানক ঝিরীপথ =
Leave a Reply