পটুয়াখালী সংবাদদাতাঃ- পটুয়াখালীর ঐতিহ্যবাহী পাতাবুনিয়া আদর্শ কৃষি ও কারিগরি মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় যারা জমি দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন তাদের নামেই মিথ্যা অভিযোগ করেছেন ওই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ।
তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রবিবার (২৯ আগস্ট) গলাচিপা থানায় একটি মিথ্যা অভিযোগ করেন পাতাবুনিয়া আদর্শ কৃষি ও কারিগরি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মু. মহসিন উদ্দিন। অভিযোগে যাদের নাম উল্লেখ করেছেন তারা সবাই অত্র প্রতিষ্ঠানে জমি বা বিভিন্ন অনুদান দিয়ে সাহায্য- সহোযোগিতা করে আসছেন কলেজ প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে । তাদের অভিযোগ,অধ্যক্ষ মু. মহসিন উদ্দিন’র দূর্নীতির বাধা দেয়ায় উল্টো এ মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে।
বকুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি মোঃ আবু জাফর খান বলেন, পাতাবুনিয়া আদর্শ কৃষি ও কারিগরি মহাবিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মানের কাজ চলছে । ওই ভবন নির্মাণের কাজ পেয়েছে পটুয়াখালীর একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান । কিন্তু ওই কাজ তদারকি করছি আমি । কাজে ব্যবহৃত সিমেন্ট বাতাসে ও বৃষ্টির পানিতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এতে কলেজের একটি অব্যবহৃত কক্ষে সিমেন্ট রেখেছি । ওই কক্ষে সিমেন্টের কিছু খালি বস্তুাও রাখা ছিল। বৃহস্পতিবার (২৬ অগস্ট) সকালে আমার ছেলে জাহিদুল ইসলাম(১৭) সিমেন্টের খালি বস্তা আনার জন্য কলেজে যায়। ওই কক্ষ তালাবন্ধ থাকায় কলেজের এমএলএসএস আপ্তের আলীর কাছে চাবি চাইলে আমার ছেলের সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেন সে । আমার ছেলে বাড়িতে এসে বিষয়টি আমার কাছে খুলে বলে এবং কান্না করে দেয়। পরে কলেজের অধ্যক্ষ মু. মহসিন উদ্দিনকে মুঠোফোনে বিষয়টি জানাই । অধ্যক্ষ আমাকে কলেজ লাইব্রেরিতে চায়ের দাওয়াত দিয়ে বলেন আসেন শুনবো কি হয়েছে। কিছুক্ষণ পরে আমি কলেজের লাইব্রেরিতে যাই,আমার সাথে কয়েজন লোক ছিলো। কলেজের অধ্যক্ষ মু. মহসিন উদ্দিনের সাথে কথা বলতেছিলাম। আমাকে দেখে চারপাশের আরও কিছু স্থানীয় লোকজন আসেন। এ সময় কলেজের এমএলএসএস আপ্তের আলী এসে সবার সামনেই তার ভুল স্বীকার করেন। তখন অধ্যক্ষের চাচতো ভাই’র ছেলে মোবাইল দিয়ে আমাদের কথা ভিডিও করতেছিলো। তাকে ভিডিও করতে বারবার নিষেধ করা সত্বেও সে শোনেনি,আমাদের মাথার উপরেই কিন্তু কলেজের সিসি ক্যামেরা রয়েছে । এতে কয়েজন লোক তার সাথে কথার কাটাকাটি করেন এর বেশি কিছু না। ঘটনার দুইদিন পরে (রবিবার) থানায় আমার নামে মিথ্যা মারধরের অভিযোগ করা হয়েছে। হেয় প্রতিপন্ন করতে এবং রাজনৈতিক জীবনে কালিমা লেপন করতে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এই অভিযোগ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমার বাবা ও চাচা জমি দিয়ে ১৯৯৮ সালে ওই (পাতাবুনিয়া আদর্শ কৃষি ও কারিগরি মহাবিদ্যালয়) কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। মূলত যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে তারা সবাই ওই কলেজে জমি দাতা। আমারা ছেলেও ওই কলেজের ছাত্র। আমি সবসময়ই ওই কলেজের দিকে খেয়াল রাখি যাতে অন্যান্য কলেজের থেকে ভালো রেজাল্ট করে এগিয়ে থাকতে পারে । ওই ঘটনার পরেরদিন (শুক্রবার) কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ মহসিন উদ্দিন কলেজের একটা রাস্তার ব্যাপারে আমার সাথে কথা বলেছেন। আমি তাকে আশ্বস্ত করি,দ্রুত এ রাস্তার ব্যবস্থা করে কিছুদিনের মধ্যেই কাজ শুরু করা হবে।
ইউপি সদস্য মোঃ জহিরুল খান বলেন, আমি ওই কলেজে জমি দিয়েছি। আমরা সবসময়ই কলেজের ভালো চাই। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল আমার নামেও থানায় অভিযোগ করা হয়েছে । আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম কিন্তু ওখানে কোন মারধরের ঘটনা ঘটেনি। আপনারা সিসি ক্যামেরা চেক করে দেখতে পারেন। কলেজের অধ্যক্ষ অনেক অনিয়ম ও দূর্নীতি করে মাঝে মধ্যে আমারা তার বাঁধা দিতাম। এতে আমাদের বিরুদ্ধে থানায় মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে।
অধ্যক্ষ মো. মহসিন উদ্দিন বলেন, চেয়ারম্যানের ছেলে জাহিদুল ইসলাম সিমেন্টের বস্তুা নেওয়ার জন্য এমএলএসএস আপ্তের আলীর কাছে কক্ষের চাবি চেয়েছে। ওই কক্ষের চাবি না দেয়ায় তার সাথে ঝামেলা হয়। পরে চেয়ারম্যান বিষয়টি আমাকে জানান। আমি তাকে কলেজে লাইব্রেরিতে চায়ের দাওয়াত দেই । আমি ভাবছছিলাম চেয়ারম্যান একা আসবেন। তার সাথে থাকা ১০-১৫ জন বহিরাগত লোক আসে তারা আপ্তের আলীর সাথে উচ্চস্বরে ডাকাডাকি করেন এবং আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন। বিষয়টি নিয়ে কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি ও গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশিষ কুমারের সাথে আলোচনা করে তার নির্দেশ ক্রমে থানায় অভিযোগ করেছি।
পাতাবুনিয়া আদর্শ কৃষি ও কারিগরি মহাবিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির সভাপতি ও গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশিষ কুমার বলেন, উভয় পক্ষকে নিয়ে গত মঙ্গলবারে (৩১ আগস্ট) আমাদের বসার কথা ছিলো। জরুরি কাজে ঢাকা আসতে হয়েছে তাই বসা সম্ভব হয়নি।
গলাচিপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এস শওকত আনোয়ার ইসলাম বলেন, কলেজের অধ্যক্ষ (মো. মহসিন উদ্দিন) থানায় একটি অভিযোগ করেছেন। আমাদের তদন্ত চলতেছে। শুনেছি,ইউএনও স্যার বিষয়টা নিয়ে বসবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন কিন্তু এখন পর্যন্ত মিমাংসার কোন লিখিত কাগজ পাইনি।
Leave a Reply