মেহেদী হাসান মাছুম লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জে উত্তরণ ইউনিটি হাউজিং লিঃ এর হরেক রকমের প্রতারণায় দিশেহারা গ্রাহক। বাহারি বিজ্ঞাপন আর লোভ লালসার বেড়াজালে ফেলে গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা পকেট বন্ধী করেছে এই হাউজিং কোম্পানি। নিদিষ্ট সময়ে গ্রাহকের ফ্ল্যাট এবং প্লট বুঝিয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও বছরের পর বছর ঘুরিয়েও ফ্ল্যাট না পেয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন অনেকেই। যাদের ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দিয়েছেন তাদের সাথেও করেছেন সীমাহীন প্রতারণা। এই হাউজিং কোম্পানি প্রতারণা করে অর্জিত বেশিরভাগ অর্থই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী নিষিদ্ধ সংগঠন জামায়েত শিবিরের কর্মকান্ডে ব্যবহার করেন বলেও নির্ভোরযোগ্য সুত্র জানায়।
জানা যায়, শুন্য থেকে উঠে এই হাউজিং কোম্পানির সাথে যুক্ত হয়ে অনেকেই কোটিপতি বনে গিয়েছেন। একেক জনের নামে কয়েকটি ফ্ল্যাট, নামে বেনামে কয়েক শতাংশ জমি এবং ব্যাংক হিসাবে রয়েছে কোটি কোটি টাকা। মূলত গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করেই এমনটা করেছেন বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা। উত্তরণ ইউনিটি হাউজিং কোম্পানির প্রতারণার ফাঁদে পড়েও সন্ত্রাসীদের মদদদাতা হওয়ায় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিতে ভয় পাচ্ছে ভুক্তভোগীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৯ সালে জামায়াতের কয়েকজন লোক তাদের নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য উত্তরণ ইউনিটি গ্রুপের আত্মপ্রকাশ করেন। এরপর স্থানীয় কয়েকজন সুনামধন্য ব্যক্তিকে আই-ওয়াস করে তাদের সহযোগীতা নিয়েই ২০১০ সালে আততামরীন ক্যাডেট স্কুল এন্ড মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে এই চক্রটি। তাদের প্রতিষ্ঠিত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই হলো তাদের প্রতারণার মূল হাতিয়ার। দূর-দুরান্ত থেকে আসা ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকই টার্গেট ছিল তাদের। অধীক মুনাফার লোভ দেখিয়ে তাদের জমাকৃত টাকা হাতিয়ে নেয় এই চক্র। একপর্যায়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পরে প্রতারণার নতুন চক আঁকতে থাকে এই চক্রটি। উত্তরণ ইউনিটি হাউজিং নামে চালু করে আরেক টাকা হাতানোর মেশিন। আকর্ষণীয় কয়েকটি সুযোগ সুবিধা দেখিয়ে ফ্ল্যাট এবং প্ল¬ট বিক্রির নামে আরেকদপায় কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় এই চক্রটি।
স্থানীয়রা জানায়, ফ্ল্যাট বিক্রির কথা বলে অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে কোম্পানিটি গত ১০ বছরে সাধারণ ক্রেতাদের কাছ থেকে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। লক্ষ্মীপুর – নোয়াখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় নাম-সর্বস্ব একাধিক প্রকল্পের সাইনবোর্ড ঝুলিয়েই প্রবাসী ও মধ্যবিত্তের কষ্টার্জিত অর্থ হাত করে ব্যবসায় লোকসান বলে নিজেদের আত্মগোপনের পাঁয়তারা করছে কোম্পানিটি।
এছাড়াও ব্যবসায়িক ঝামেলা এড়াতে এবং ক্রেতাদের মানসিক চাপে রাখতে কোম্পানির কর্মকর্তারা বর্তমান সরকারের কিছু আমলা-এমপি-মন্ত্রী এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিদের তাদের বিভিন্ন প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত, এমনটি প্রচার করতেন। যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। টাকার জন্য একাধিকবার কর্তৃপক্ষের কাছে ধরনা দিলেও তারা দেই দিচ্ছি বলে ঘুরাচ্ছে এবং অনেক ভুক্তভোগী মহিলাকে চাপ প্রয়োগ করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
উত্তরণ ইউনিটি হাউজিং কোম্পানি থেকে ফ্ল্যাট কিনে প্রতারিত হয়েছেন এমন কয়েকজন ভুক্তভোগী এই প্রতিনিধিকে জানান, আমাদের সরলতার সুযোগ নিয়ে বিভিন্নরকম সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা বলে এই কোম্পানিটি আমাদের বেশ কিছু টাকা আত্মসাৎ করে। আত্মসাৎকৃত টাকা উদ্ধার করতে না পেরে একপর্যায়ে আমরা অধিক দামে ফ্ল্যাট কিনতে বাধ্য হই। ফ্ল্যাট কেনার সময় চুক্তিনামায় এবং ইঞ্জিনিয়ারের করা ডিজাইনে গাড়ির পার্কিন, বাড়ির ছাদ ব্যবহার, গ্যাসের সংযোগসহ নানাবিধ সুযোগ সুবিধা দেওয়ার কথা থাকলেও এখন তারা কোনটিই দিচ্ছে না। এছাড়াও চুক্তিনামায় ৫ তলা ভবন করার কথা থাকলেও বাস্তবে তারা ৬ তলা ভবন নির্মান করেছে। আমরা সব কিছু দেখেও তাদের ভয়ে নির্ভয়ে সহ্য করে যাচ্ছি।
নামপ্রকাশ না করা শর্তে উত্তরণ হাউজিং কোম্পানির কয়েকজন শেয়ার হোল্ডার ক্ষোপ প্রকাশ করে জানান, এই হাউজিং কোম্পানির সাথে যুক্ত হয়ে নিঃস্ব হওয়ার উপক্রম হয় তাদের। বিভিন্ন সময় হিসাবে গড়মিল করায় নিজেদের মধ্যে কয়েকবার হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে লোকসান গুনে এই হাউজিং কোম্পানির শেয়ার হোন্ডার বিক্রি করতে বাধ্য হয় তারা।
উত্তরণ ইউনিটি হাউজিং কোম্পানির পরিচালনা কমিটির অন্যতম সদস্য হাসান ভুঁইয়া মুঠোফোনে জানান, উত্তরণ ইউনিটি হাউজিং কোম্পানিতে টাকা রেখে তিনি নিজেই বেকাদায় পড়েন। একপর্যায়ে তিনি টাকা উদ্ধারের জন্য নিজের নামে চড়া দামে ফ্ল্যাট বুক দিতে বাধ্য হয়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তরণ ইউনিটি হাউজিং কোম্পানির ফ্যাইনান্স দেলোয়ার হোসেন কথা এড়িয়ে জান। নিজেদের মধ্যে ছোটখাটো বিষয় নিয়ে কাঁদা ছোড়াছুড়ি না করতে প্রতিবেদককে অনুরোধ করেন এবং তিনি বিষয়টি বসে সমাধান করার আশ্বাস দেন।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে উত্তরণ ইউনিটি হাউজিং কোম্পানির অফিসে গিয়ে খোঁজ মেলেনি চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ এবং ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াছিন হায়দারের । তাদের মুঠোফোনে একাধিক বার কল দিয়েও পাওয়া যায়নি তাদের।
Leave a Reply