টিন এজের কিশোর কিশোরীরাই মাদকাসক্ত বেশী এর প্রধান কারন এ মুহুর্তে তাদের কোন লেখা পড়া নেই। তারা অনেকটা অলস সময় কাটাচ্ছে এবং প্রায় সবার হাতে স্মার্ট ফোন। সারাক্ষনই ফোন হাতে কখন ও গেম এ আসক্ত, কখনও পর্ন ছবি বা আবার কখনও হিন্দি ছবিতে ব্যস্ত। সন্ধ্যা হলে শহরের বা গ্রামের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে আড্ডা। তারা শোনে না তাদের বাবা মায়ের কথা, শোনে না তাদের শিক্ষকদের কথা। শোনে না কোন গ্রামের শ্রদ্ধেয় বড় ভাইয়ের কথা বা কোন অভিভাবকের কথা, তারা এখন এতটাই উচ্ছৃংখল যে তাদের সাথে কথা বলতে তাদের বাবা মাও ভয় পায়। শিক্ষক বা অভিভাবক তো অনেক পরের কথা। গ্রাম গঞ্জের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে তাদের আড্ডাখানা। কোন কোন স্থানে তাদের হাতে সিগারেট, কোন মোড়ে হাতে ফেনসিডিল এবং মরণ ব্যাধি, ইয়াবা ট্যাবলেট পর্যন্ত তাদের হাতে নিয়ন্ত্রনের কোন পথ খোলা আছে বলে আমার মনে হয় না। তাদের সামনে দিয়ে কোন মেয়ে, স্কুল কলেজের ছাত্রী, গ্রামের গৃহ বধূ বা অর্ধবয়স্ক নারীরাও যেন অনেকটা অসহায়। তাদের সামনে দিয়ে রাস্তা অতিক্রম করা যেন একেবারে অসম্ভব। এ জন্য শুধুমাত্র তাদেরকে দায়ী করা যাবে না। প্রথমত দায়ী আমাদের সমাজ ব্যবস্থা। মহামারী করোনা ভাইরাস এ মুহুর্তে যেমন সাতক্ষীরাতে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং আক্রান্তের সংখ্যা ও দিন দিন অনেক গুন বেড়েই চলেছে এবং প্রশাসন ও নড়ে চড়ে বসেছে এবং অনেক পরে হলেও বিভিন্ন বাজার বা মহল্লা নিয়ন্ত্রন করার জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ঠিক তেমনি কিশোরদের উৎপাত যেখানে বেড়ে চলেছে যদি প্রশাসন একটু দৃষ্টি দিতো হয়তোবা কিশোর অপরাধ অনেকটা কমে আসতো। বাবা মা সন্তানদের নিয়ন্ত্রন করার যথেষ্ট চেষ্টা করছে কিন্তু কিশোররা এতটাই আসক্ত যে তারা যেন কোন কিছুই মানতে নারাজ। প্রতিবাদ করলেই যেন বাবা মা ও তাদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। কিশোর অপরাধ প্রবনতা এতটা ছড়িয়ে পড়েছে যে এ মুহুর্তে নিয়ন্ত্রন করতে না পারলে সামনে এমন দিন আসবে তখন আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। তাই আমি মনেকরি যারা আগামী দিনের দেশ গড়ার কারিগর আগামী দিনের ভবিষ্যত এবং বাবা মা যাদের উপর ভর দিয়ে বৃদ্ধ বয়সটা পার করতে চান তাদের কে রক্ষা করা এ সমাজের এবং আমাদের প্রশাসনের একান্ত দায়িত্ব। প্রশাসন ইচ্ছ করলে সব কিছুই করতে পারেন। আমাদের দেশটা অনেকটা ছোট এবং জনসংখ্যার দিক দিয়ে অনেক বড়। প্রতি বছর যে পরিমান শিক্ষিত ছেলে মেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হচ্ছে কিন্তু সে পরিমান চাকরী পাচ্ছে না সুতরাং তাদের জীবনটা ও এখন অভিশাপে ভরা। বেকার জীবন কতটা ভয়াবহ শুধু তারাই জানে। সুতরাং তারাও এখন অনেকটা হতাশাগ্রস্থ এবং জীবনটা অনেকটা যন্ত্রনাদায়ক তাই বিকল্প পথ হিসাবে ও বেছে নিয়েছে মাদক। তাই বর্তমানে বাংলাদেশের এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে এ মরন নেশা। এই মরণ নেশা থেকে আমাদের যুব সম্পদ কিশোর কিশোরীদেরকে রক্ষ করা না গেলে জাতির স্বপ্ন চিরতরে ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। অল্প বয়সের ছেলে মেয়েদের পারিবারিকভাবে নিয়ন্ত্রনে না থাকার কারণে তারা আজ মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে। এর পিছনে বেশ কিছু কারন আছে যেমন সহজ আনন্দ লাভের বাসনা, মাদকের কুফল সম্পর্কে অস্পস্ট ধারণা, প্রতিকুল পারিবারিক পরিবেশ বান্ধব ও সঙ্গী সাথীদের প্রভাব, পারিবারিক পরিমন্ডলে মাদকের প্রভাব, কৈশোর ও যৌবনের নিয়ন্ত্রনহীন মনোভাব এছাড়া বেকার জীবন, হতাশা এবং আর্থিক অনটন মাদকের সহজলভ্যতা ও নৈতিক শিক্ষার অভাব ইত্যাদি এবং আমার মতে, এর পিছনে অন্যতম কারন ও জড়িত যেমন কৌতুহল মেটাতে ও কুসৎসর্গে পড়ে যারা একবার বা দুইবার মাদক গ্রহন করেছে তারা আর এর সং¯্রব থেকে বের হতে পারে না। নতুন যে কোন জিনিষের প্রতি কিশোরদের চিরন্তন নেশা, নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের দুর্নিবার আকর্ষন ও তাৎক্ষনিক ভাল লাগার অনুভূতি এবং বিশেষ করে মাদক ব্যবসায়ীদের পেতে রাখা ফাদে নিরুপায় কীট পতঙ্গের মত ধরা দেওয়া। এভাবেই নৈরাজ্যের তীব্র দাবানলে দগ্ধীভূত হয়ে কিশোর সমাজ বেছে নেয় মাদকাসক্তির মাধ্যমে আতœবিনষ্টির পথ। যুব সমাজ দিনের পর দিন নেশাগ্রস্থ হওয়ার কারনে তার শারিরিক, মানসিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যায় আক্রান্ত হতে যাচ্ছে। কোন এক সময় তাকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হচ্ছে এবং চারিদিকে মানুষ তাদেরকে ঘৃনা ভরে প্রত্যাখ্যান করে কোথাও সামান্য আদর যতœ বা ভালবাসা পায়না। এ যেন এক দুর্বিসহ জীবন তাদেরকে নেতৃত্ব দিতে হয়। সুতরাং যুব সমাজকে অবক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য সরকার কে অনেক পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। পাশাপশি স্থানীয় সরকার এবং অঞ্চলের যে প্রশাসন আছে এবং বিশেষকরে জনগনকে তাদের সন্তানদের সুস্থ মানসিকতা বিকাশের লক্ষ্যে জনসচেতনতা মূলক কিছু পরিকল্পনা গ্রহনে আগ্রহী হতে হবে। অবৈধ ভাবে মাদক পাচার এবং মাদকাসক্তি যে একটি ভয়াবহ সমস্যা এ সম্পর্কে জনসচেতন মূলক সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে জনগনকে সংগে নিয়ে। শুধুমাত্র তখনই সম্ভব হবে যুব সমাজ বা আমাদের কিশোর কিাশোরীদেরকে ফিরিয়ে আনা। মাদকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সবাইকে সম্যকভাবে অবহিত করে এর বিরুদ্ধে সমাজের সর্বস্তরের জনগনের গনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে এবং প্রশাসনকে কঠোর ভাবে হস্তক্ষেপ করতে হবে। শুধুমাত্র তখনই সম্ভব হবে আমাদের কিশোরদের সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনা।
লেখকঃ জহিরুল ইসলাম শাহিন
সহকারী অধ্যাপক
Leave a Reply