মোঃ শেখ শহীদুল্লাহ্ আল আজাদ. স্টাফ রিপোর্টারঃ
খুলনা জেলা বিভাগীয় শহরের অন্যতম প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ছখিনা (ছদ্ম নাম)। খুলনা পাইওনিয়ার মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০২০ সালে তিনি ওই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষের নিয়ম-বহির্ভূত পাঁচশ টাকার দাবি পূরণ করতে না পারায় তিনি সনদপত্র তুলতে পারছেন না। একই অভিযোগ সুমাইয়া আক্তার (ছদ্ম নাম)’র। করোনার সময়ে পরিবারের উপর্জনকারী ব্যক্তির আয় কমে যায়। অর্থনৈতিক দূরাবস্থা থেকে এখনও মুক্তি মেলেনি। সংসারের আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন স্থানে চাকুরির জন্য ধর্ণা দিচ্ছেন তিনি। বিপত্তি বাধে এসএসসি পাশের সনদে। আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে পাঁচশ’ টাকা খরচ করে সার্টিফিকেট তুলতে না পারায় ঝুঁলে রয়েছে চাকরিপ্রাপ্তি। শুধু ছখিনা ও সুমাইয়া আক্তারের ক্ষেত্রেই যে এমনটি তা নয়। ২০২০ সালে ওই বিদ্যালয় থেকে ৫৩ জন পাইওনিয়ার মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। তার মধ্যে ৫২ জন শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের সাথে কথা হলে এমনটাই অভিযোগ করেন। খুলনার স্বনামধন্য সরকারি ও এমপিওভূক্ত কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে জানা যায়, এসএসসি বা জেএসসির সনদ বিতরণে তারা কোন প্রকার অর্থ আদায় করছে না। শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন কার্ডসহ বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে নির্দিষ্ট ফর্মে স্বাক্ষর করে তুলতে পারছেন এসএসসি পাসের সনদ। খুলনা সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যলয়ের প্রধান শিক্ষক মো: আবুল হোসেন জানান, এসএসসি বা জেএসসি পাসের সনদ তুলতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোন অর্থ আদায়ের নিয়ম নেই। তারাও কোন অর্থ আদায় করছেন না। এ দিকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে নির্দিষ্ট ফর্মে স্বাক্ষর করে নিয়ে যেতে পারছেন তাদের সনদটি।
ঐ একই ব্যাপারে কথা হয় উদয়ন খুলনা জিলা পুলিশ স্কুলের প্রধান শিক্ষক শেখ মাকসুমুল হাকিম শাহিনের সাথে। তিনি জানান, সনদ বিতরণের ক্ষেত্রে অর্থ আদায়ের নিয়ম আছে বলে তার জানা নেই। তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সনদ বিতরণে কোন অর্থ গ্রহণ করা হয় না।
উক্ত বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থীর মা অভিযোগ করে বলেন, করোনার সময়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাসিক বেতন মওকুফ করলেও পাইওনিয়ার স্কুল কর্তৃপক্ষ কোন ছাড় দেয়নি। জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সেশন চার্জসহ ৩২’শ টাকা আদায় করা হয়েছে তার কাছ থেকে। সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরূদ্ধে পরিচালনা পরিষদের নিকট কোন অভিযোগ করেনি। উক্ত অভিযোগের বিষয়ে জানতে গেলে পাইওনিয়ার মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা জাফরোজা খানম প্রথমেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খরচের নানা ফিরিস্তি তুলে ধরেন প্রতিবেদকের সামনে। তিনি জানান, করোনা, পরবর্তী স্কুল পরিষ্কার করতে তার খরচ হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। সনদ প্রদানে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পাঁচশ টাকা নয়, তিনশ’ টাকা নেওয়া হচ্ছে বলে তিনি স্বীকার করেছেন। অন্যান্য বিদ্যালয় থেকে সনদ বিতরণের ক্ষেত্রে কোন টাকা নেওয়া হচ্ছে না বলে জানানো হলে উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমাদের খরচ আছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান তার নিজস্ব সিস্টেমে চলে। সনদের টাকা নেওয়ার যৌক্তিক কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বোর্ড থেকে সার্টিফিকেট তুলতে যাতায়াত ভাড়াসহ আনুসাঙ্গিক খরচ বাবদ এ টাকা নেওয়া হচ্ছে। তবে একই প্রশ্নের জবাবে ভিন্ন কথা বলেন, জেলা শিক্ষা অফিসার রুহুল আমিন।বিষ্ময় প্রকাশ করে তিনি , বলেন, ‘বোর্ড থেকে সনদ আনতে প্রতি শিক্ষার্থী থেকে তিনশ’ টাকা যাতায়াত খরচ হয়? এসএসসির সনদের জন্য তো কোন টাকা লাগে না। উক্ত বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘কোন স্কুল সার্টিফিকেট বিতরণে টাকা নিচ্ছে এমন অভিযোগ এখনও পায়নি। আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বলব। নিয়মের বাইরে টাকা নিলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে জানতে পাইওনিয়ার মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হালিমা ইসলামের সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন ধরেননি তিনি।
Leave a Reply