গৌতম চন্দ্র বর্মন, ঠাকুরগাঁও: অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেওয়া ছাড়া প্রায় দেড় বছরে বিদ্যালয়ে যাওয়ার সুযোগ হয়নি নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মিনহাজ আহমেদের। বাড়িতে বসেই অ্যাসাইনমেন্ট লিখে, মোবাইলে ফেসবুক, গেম ও টিভি দেখেই অধিকাংশ সময় পার করে সে। মাঝেমধ্যে সঙ্গীদের সঙ্গে গেছে খেলার মাঠে। ১২ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয় খুলে দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তে ঈদের চাঁদ দেখার মতো আনন্দ অনুভব করছে বলে জানায় সে। তার চোখে-মুখে খুশির ঝিলিক। শুধু মিনহাজ নয়, বিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্তে সকল শিক্ষার্থীই এখন উৎফুল্ল।
আর বিদ্যালয়ে বিদ্যালয়ে শ্রেণি কক্ষগুলোতে চলছে ধোয়া-মোছার কাজ। চলছে ওয়াশ ব্লক ও খেলার মাঠ পরিষ্কার। অফিস কক্ষে মজুত করা হয়েছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, স্যাভলন, স্প্রে-মেশিন ও মাস্ক। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠদান কার্যক্রমের প্রস্তুতি চলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। এ যেন নতুন করে সকল বিদ্যাপীঠ সাজছে নতুন সাজে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল কেন্দ্রীয় উচ্চ বিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায়, ধোয়া-মোছার কাজ শেষ। মাঠের ঘাস কাটছেন দুই শ্রমিক। কড়া রোদে দাঁড়িয়ে তাদের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। বেঞ্চগুলো এরই মধ্যে পরিষ্কার করা হয়েছে। দূরত্ব বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় বেঞ্চও নির্মিত ভবনে সংযোজন করা হচ্ছে। বিভিন্ন সচেতনতা ও নির্দেশনামূলক লেখা টানানো হয়েছে। শিক্ষার্থীরাও একে অন্যের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছে। চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ছোট-বড় শিক্ষার্থীর দল। অনেকে মেতে উঠেছে গল্প-আড্ডায়। তাদের চোখে-মুখে আনন্দের ঝলকানি। পরিপাটি স্কুলের আঙিনা যেন শিক্ষার্থীদের অপেক্ষার প্রহর গুণছে।
রাণীশংকৈল কেন্দ্রীয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবু শাহান শাহ জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের জ্বর মাপার জন্য থার্মোমিটার, হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ প্রয়োজনীয় উপকরণও রাখা হয়েছে।
অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেওয়ার জন্য বিদ্যালয়ে আসা শিক্ষার্থীরা জানায়, দীর্ঘদিন পর বিদ্যালয় খোলার সংবাদে খুব ভালো লাগছে তাদের।
বিদ্যালয়ে আসা এক অভিভাবক জানান, বন্ধের সময় বাড়িতে ছেলেমেয়েদের তেমন লেখাপড়া হয়নি। শিক্ষাক্ষেত্রে তারা অনেক পিছিয়ে পড়েছে। অল্প সময়ে পরীক্ষার পুরো প্রস্তুতি নিতে পারবে কি-না এ নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন তিনি।
তনিকা তাবাসসুম তনি নামে এক শিক্ষার্থী বলে, ‘আমাদের মতো যারা বেসরকারি স্কুল-কলেজে তাদের তো বকেয়া বেতন সবই নিয়ে নিয়েছে। করোনাকালে করুণ অবস্থায় কেটেছে মানুষের জীবন। এর মধ্যে পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীদের আর বেতন নিয়ে পরিবারের বাড়তি দুশ্চিন্তাও রয়েছে।’
নেকমরদ সরকারি আলিমুদ্দীন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আকতার হোসেন বলেন, বিদ্যালয়ে ৫২৮ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এসএসসি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৮৭জন। ৮ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছে। বিদ্যালয়ে ঝাড়ামোছা, পানি ছিটানো, জীবাণুনাশক ছিটিয়ে শ্রেণিকক্ষগুলো করা হচ্ছে পাঠদানের উপযোগী। দীর্ঘসময় মুঠোফোন ও গুগলম্যাটে পাঠদান কার্যক্রম চালানো হয়েছে। পাশাপাশি অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় মনোযোগী রাখার চেষ্টাও চলেছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আলী শাহরিয়ার হোসেন বলেন, সরকারের ১৯ দফা নির্দেশনা মতে রাণীশংকৈল উপজেলার ৬ কলেজ, ৫০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১৪টি মাদ্রাসা ও ১৫৬ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলার প্রস্তুতি চলছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সার্বিক প্রস্তুতি দেখতে পরিদর্শন করা হচ্ছে। শনিবার সমন্বয় সভা করে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়া হবে।
Leave a Reply