মিশন আলী,স্টাফ রিপোর্টারঃ
বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক (ভারপ্রাপ্ত) আহবায়ক মোঃরাশেদ খাঁন এর আবেগ ঘন ফেসবুক স্ট্যাটাস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাসছে সেখানে নানা শ্রেনী পেশার মানুষ মন্তব্য করতে থাকেন বিস্তারিত ফেসবুক স্ট্যাটাস তুলে ধরা হলো ।
একসময় জীবনে খুব শান্তি পেতাম নীলক্ষেত থেকে ৮০ টাকা দিয়ে তেহারি খেয়ে। টিউশনির ২৫০০ টাকা পেয়ে আত্মতৃপ্তির ঢেঁকুর গিলতাম। নীলক্ষেত কিংবা নিউমার্কেটের ফুটপাত থেকে ১৫০ টাকার শার্ট কিনে, আরও ১০০ টাকা দিয়ে দর্জি থেকে নিজের গায়ের মাপে ফিটিং করে নিয়ে পরিধান করে আয়নার সামনে গিয়ে তাকাতাম, আর মনে মনে ভাবতাম ২৫০ টাকার শার্টটা ভালোই হয়েছে।
টিউশনি করে বাসে ফেরার সময় প্রচন্ড জ্যামে বসে ঘর্মাক্ত দেহে ঢাকা শহরের বড় বড় বিল্ডিংয়ের দিকে তাকাতাম আর ভাবতাম, মানুষের এতো এতো বড় বাড়ি, আর আমরা হলে ঘুমানোর জন্য দেড় হাত জায়গার জন্য এতো যুদ্ধ করি? মুহুর্তেই স্বপ্নে বিভোর হয়ে যেতাম, আমিও একদিক এমন বাড়ির মালিক হবো।
মানিব্যাগে টাকা কম। যা আছে, তা দিয়ে হয়তো আরও ২-৪ দিন চলতে হবে। অসহায় বয়স্ক লোক সামনে হাত পাতলে না দিয়ে যেতে খারাপ লাগতো। মুহুর্তেই মনে হতো, এই দানের বরকতে হয়তো আমার অবস্থার উন্নতি হয়ে যেতে পারে…!
হলের খাবার খেয়ে শরীরের কোন আয় উন্নতি না হওয়ায়, প্রতি সপ্তাহেই ভার্সিটির মেডিকেল বই নিয়ে মেডিকেলে যেতে হতো। সমস্যা কি? ডাক্তার যা ওষুধ দিতো তাতে কোন কাজ হতো না। পরে একদিন বড় ভাইয়ের কাছ থেকে জানতে পারলাম, এখানকার ডাক্তারগুলো এতো অভিজ্ঞ না। পরে ঢাকা মেডিকেল যাওয়া শুরু করলাম। তবুও রোগবালাই ভাল হয়না। ডাক্তার বলে, ভাল খাবার, পানি খাবেন। আমি খাই হলের ডাল, টাঙ্কির পানি আর মোটাচালের শক্ত ভাত! শরীর কিভাবে ভাল হবে? তবুও রাতে ১ মুঠো ছোলা ভিজিয়ে, সেটা সকালে চিবিয়ে খেয়ে স্বপ্ন দেখতাম, রোগাপটকা দেহটা একদিন সিক্সপ্যাক হয়ে যাবে….
২.৫ টাকায় ১০০ টা মেসেজ কেনা যেত। কলেজ লাইফের বন্ধুদের মাঝেমধ্যে ক্ষুদে বার্তা পাঠাতাম। অপেক্ষায় থাকতাম, সে কি রিপ্লাই করে। বন্ধু – বান্ধবীরা সব যে যার মত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। একসময় ক্ষুদেবার্তা চালাচালি বন্ধ হয়ে পুরাতন বন্ধুদের সাথে দূরত্ব তৈরি হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন নতুন নতুন বন্ধু হয়। তাদের সাথে রাত-বিরেত হলের মাঠে বসে আড্ডা, খোশগল্প, কলেজ লাইফের স্মৃতি রোমন্থন। আড্ডায় আড্ডায় বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে গেলো গণরুমের বন্ধুদের ২-৪ জন।
ভার্সিটির বন্ধুদের অনেকের নাম ভুলতে বসেছি, স্কুল কলেজের বন্ধুদের সাথে তো প্রায় দেড় যুগ যোগাযোগ নাই। তবে এখনো কানে ভাসে সেই হাইস্কুলের দপ্তরির টিফিন ও ছুটির ঘন্টা। স্কুলের বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাওয়া দিনগুলো। মনে পড়ে স্কুলের সেই ভাল লাগা মেয়েটির ঝাপসা স্মৃতি। কাকে যেন একটুআধটু ভাল লাগতো, তবে নামটা মনে আনতে এখন বেশ ভাবতে হয়, একটু থামতে হয়…. কিন্তু জীবন সে তো কখনো থামার নয়, হাজারো ভাললাগা ভুলে, হাজারো স্মৃতি অমলিন হয়ে, নতুন ভাললাগা, ভালবাসা, বন্ধুত্ব, চলার পথ তৈরি হয়…. এভাবেই একসময় চলার পরিসমাপ্তি ঘটে, একসময় ১ মিনিটে হয়তো পুরো জীবনের শুরু থেকে শেষটা ভাবা যায়….!
Leave a Reply