আব্দুল খালেক সুমন।
লোভ আর বিবেকহীনতা মানুষকে করে তোলে পশুর চাইতে বর্বর। মহান পেশা পুলিশে দায়িত্ব পালনে যতই দিন যাচ্ছে অপরাধ তদন্তে অপরাধীদের নিত্যনতুন কৌশল ও বর্বরতা শরীরের রক্ত কে হিম করে দিচ্ছে।১২ বৎসরের বালক ইসমাইল হোসেন লেখাপড়া করে উত্তরা মডেল স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীতে। ১৬/৩/২০২১ ইং তারিখে নিখোঁজ হয়,অনেক খোজাঁখুজি করে ছেলের সন্ধান না পেয়ে দরিদ্র মুদি দোকানদার বাবা নূরনবী আশ্রয় নেয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তুরাগ থানায় ১৮/৩/২১ ইং তারিখে করেন একটি নিখোঁজ জিডি।১৯/৩/২১ তারিখে গাজীপুর মেট্রোপলিটন টঙ্গী পশ্চিম থানাধীন গুটিয়ায় তুরাগ নদীর শাখা নদীর কিনারায় একটি লাশ ভাসমান অবস্থায় আছে মর্মে খবর পেয়ে ব্যাচমেট এসআই সাব্বির সঙ্গীয় ফোর্স সহ অজ্ঞাতনামা লাশটি উদ্ধারপূর্বক সুহরতহাল রিপোর্ট লিখে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করেন এবং উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে বেতারের মাধ্যমে আশেপাশের থানায় লাশটির পরিচয়ের জন্য বার্তা প্রেরন করেন। পূর্বের জিডির তথ্যানুসারে তুরাগ থানা কতৃপক্ষ নিখোঁজ ইসমাইলের বাবা নুরনবী কে টঙ্গী পশ্চিম থানায় পাঠায়। খুনীরা হত্যা করেই ক্ষান্ত হয় নাই তারা যাতে কেউ লাশটি না চিনে তাই লাশের মুখটি বিকৃত করে ফেলে। বাবা নুরনবী লাশটি দেখে প্রথমে চিনতে না পারলেও পরে জামাকাপড় দেখে চিৎকার করে উঠে নিশ্চিত করে এটা তার সন্তান ইসমাইল এর লাশ।লাশটির পরিচয় নিশ্চিত হবার পর জিএমপির মান্যবর কমিশনার স্যার,ডিসি অপরাধ দক্ষিন স্যার,এডিসি স্যার, এসি স্যার, টঙ্গী পশ্চিম থানার ওসি স্যার মামলাটি অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় নিয়ে রহস্য উদঘাটন করার দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।মামলার দায়িত্ব পেয়ে আমার ব্যাচমেট ইয়াসির আরাফাত হত্যাকান্ডের শিকার ইসমাইলের পিতা নুরনবীর সাথে কথা বলে এবং জানতে পারে একটি নাম্বার থেকে একাদিকবার ফোন দিয়ে ১০ লক্ষ / ৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপন দাবী করে। এই তথ্যের উপড় মামলাটি নতুন মোড় নেয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা মোবাইলের মালিক একজন মহিলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করিলে মহিলা জানায় তার মোবাইলটি একমাস পূর্বে হারিয়ে যায়। কোথায় হারাইছে জানতে চাইলে মহিলা জানায় সে হামীম গ্রুপের গার্মেন্টসে চাকরি করে এই তথ্যের ভিত্তিতে তদন্তকারী কর্মকর্তা হামীম গ্রুপের সিসি ক্যামেরা রেকর্ড সংগ্রহ করেন এবং দেখতে পারেন এক মহিলা মোবাইলটি নিয়েছে।ঐ মহিলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করিলে জানায় সে মোবাইলটি তার স্বামী আতাউল কে দিয়েছে।এই সুত্র ধরেই এসআই /আরাফাত গ্রেফতার করে আতাউল কে। আতাউল হত্যার কথা স্বীকার করে জানায় টাকার লোভে তার বন্ধু রবিউল ইসলাম রবু ও নেয়ামুলের সহযোগিতায় তারা ইসমাইল কে অপহরণ ও হত্যা করে। তার তথ্যামতে গ্রেফতার হয় নেয়ামুল।কিন্তু ধরাছোঁয়ার বাহিরে থেকে যায় রবিউল ইসলাম রবু। উর্ধ্বতন স্যারদের দিকনির্দেশনায় তথ্য প্রযুক্তির সহয়তায় তুরাগ থানাধীন এলাকা হতে গতকাল সারারাত অভিযান করে আমি এবং টংগী পশ্চিম থানার সেকেন্ড অফিসার অরবিন্দ স্যার মিলে আজ ভোর ৬ টার দিকে সফল অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে আসামী রবিউল রবুকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হই।হত্যার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ম্যাজিস্ট্রেট স্যারের কাছে রবিউল স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় যে,,গত ১৬/৩/২১ তাং বিকাল ৫ ঘটিকার সময় নেয়ামুল ইসমাইল কে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে উত্তরা ১০ নং সেক্টরে নিয়ে আসে। ইসমাইল কে সিএনজিতে উঠিয়ে আতাউল, নেয়ামুল ও রবিউল তিনজন উত্তরার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে এবং ইসমাইল এর বাবার কাছে মোবাইলে কল দিয়ে ১০ লাক্ষ টাকা মুক্তিপন দাবী করে,, টাকা না দিলে তারা ইসমাইল মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেয়।গরীব নুরনবীর ১০ হাজার টাকা দেওয়ার সামর্থ্য নাই ১০ লাক্ষ টাকা দিবে কিভাবে?আসামীর ওইদিন টাকা না পেয়ে রাত একটার দিকে ইসমাইল কে রবিউলের বাসায় রাখে এবং অযানের পরে আবার তিনজন ইসমাইল কে নিয়ে সিএনজিতে উঠিয়ে ঘুরতে থাকে আর মোবাইলে নুরনবীর কাছে মুক্তিপনের টাকা দাবী করতে থাকে। গরীব নুরনবীর কাছে টাকা নাই বলে জানায় তার ছেলের জীবন ভিক্ষা চায় এবং সে পুলিশ এর আশ্রয় নিয়েছে বলে জানায়। আসামীরা অনেক চেষ্টার পরেও মুক্তিপনের টাকা না পাওয়ায় তারা ইসমাইল কে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়ে। সারাদিন সিএনজি দিয়া ঘুরে রাত ১১ টার দিকে ইসমাইল কে নিয়ে তারা আশুলিয়া রোডে ফাঁকা জায়গায় সিএনজি থামিয়ে তিনজন মিলে ইসমাইল এর গলায় গামছা পেচিয়ে শ্বাসরুদ করে মেরে ফেলে এবং ইট দিয়ে মুখে বাড়ি দিয়ে থেথলিয়ে দেয় যেনো কেউ চিনতে না পারে।পরে তারা লাশ নিয়া রাত ১২ টার দিকে প্রত্যশা ব্রীজ থেকে ইসমাইল এর লাশ তুরাগ নদীতে ফেলে দেয়।
এস আই শুভ মন্ডল এর আইডি থেকে নেওয়া।
Leave a Reply