ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ দেশের উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা ঠাকুরগাঁও। এ জেলার ৫টি উপজেলার ৪টিই সীমান্ত ঘেষা। এখানে দিন দিন যেমন বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা তেমনি বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা । শহর জুড়ে করোনা শনাক্ত হচ্ছে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশেরও বেশি। এমন পরিস্থিতিতে হাসপাতাল গুলোতেও বেড়েই চলেছে করোনায় আক্রান্ত রোগীর চাপ।
করোনা সংক্রমন বেড়ে যাওয়ায় সারাদেশের ন্যায় ঠাকুরগাঁওয়েও চলছে ৭দিনের কঠোর লকডাউন। কিন্তু লকডাউনে বেশিরভাগ মানুষই মাস্ক পরছেন না। দোকানপাট, কাঁচাবাজারে স্বাস্থ্যবিধি মানছে না কেউই। কাঁচাবাজারে মানুষের ভিড় চোখে পড়ার মতো। সোমবার সকাল পর্যন্ত জেলায় সর্বমোট করোনা সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ৩৮৬৫ জন, যাদের মধ্যে ২৩৬৭ জন সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র পেয়েছেন এবং মৃত্যু হয়েছে ৯৫ জনের।
শহরের কালীবাড়ি বাজারের মাছের পাইকারি আড়ত, মাংসের দোকান ও সাধারণ পাঠাগার চত্বরে আমের বাজারে লোকজনের সমাগম দেখা গেছে । এছাড়াও কালিবাড়ি বাজারে বিভিন্ন দোকানগুলোতে মানুষকে গাদাগাদি করে বিভিন্ন পন্য ক্রয় করতে দেখা গেছে। লকডাউন ঘোষিত শহরের কালীবাড়ি মাছের আড়তে গাদাগাদি করে মাছ কিনছেন ক্রেতারা। মুখে মাস্ক নেই কেন জানতে চাইলে দু-একজন বলেন, “মাস্ক পকেটে আছে। বেশি ভিড় দেখলেই পড়বেন”। এসব দেখে মনে হচ্ছে কোন প্রকার করোনা নেই ঠাকুরগাঁওয়ে। এর মধ্যে ঠাকুরগাঁও রোড বাজারে অটোবাইকের ভীড়ে যানযট লেগেই থাকছে। সেখানে বাজারের ভেতরেও ক্রেতা-বিক্রেতারা মাস্কবিহীন অবাধে চলাফেরা করছেন। অন্যদিকে সদর উপজেলার শীবগঞ্জ, ভুল্লি, বড় খোচাবাড়ী, সালন্দর, রুহিয়া, ফাড়াবাড়ি, দানারহাট, রামনাথ, গড়েয়া, ভেলাজান, আখানগরসহ বিভিন্ন হাট বাজারে মানুষজন ভীড় জমিয়ে বিভিন্ন পন্য ক্রয় করতে দেখা যায়।
সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঠাকুরগাঁও শহরের বিভিন্ন রাস্তায় যানবাহন ও মানুষের চলাচল দেখা গেছে। মোড়ে মোড়ে যানবাহন থামিয়ে তল্লাশি করছে পুলিশ। শহরের প্রধান সড়কে একাধিক স্থানে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। কিন্তু তার পরেও অনেক মানুষ বাহিরে ঘুরাফেরা করছে। অনেক দোকান হাফ সাটার খুলে বিক্রয় করতে দেখা গেছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে ও লকডাউন কার্যকর করতে পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে।
বেশিরভাগ এলাকায় দোকানপাট খোলার নতুন কৌশল অবলম্বন করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা দোকানের একটি সাটার অর্ধেক খোলা রেখে দোকানের সামনে চেয়ারে বসে থাকছেন। ক্রেতারা গেলেই সাটার উঠিয়ে পন্য বিক্রি করছেন তারা। প্রশাসন বা আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দেখলেই ঝাপ বন্ধ করে লুকিয়ে পরছেন, তারা চলে গেলে আবার আগের নিয়মেই দোকান খুলে ব্যবসা করছেন। পৌর শহরের ১২টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলরদের উদ্যোগে করোনা সচেতনতায় তেমন কোন ধরনের প্রচারণা লক্ষ্য করা যায়নি। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানদের কোন তৎপরতা চোখে পরছে না। ফলে এ জাতীয় ঘটনাগুলো বেশি ঘটছে। জেলার সচেতন মহলের দাবী জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মাঠে থাকাটা এ অবস্থায় বেশ জরুরী। এমনটা হলে জেলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হবে এবং প্রকৃত অর্থেই লকডাউন কার্যকর হবে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে রয়েছে। তথ্য পেলে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে।
জেলা সিভিল সার্জন মাহফুজার রহমান সরকার বলেন, কঠোরভাবে লকডাউন কার্যকর করা না গেলে সংক্রমণের হার কমবে না। মহামারির এ দুঃসময়ে জেলাবাসীকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই বলে তিনি জানান।
Leave a Reply