ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি:লকডাউন শিথিল হওয়ার পর থেকে ঠাকুরগাঁওয়ের বিসিক শিল্পনগরীর কারখানাগুলোতে ফিরে এসেছে কর্মচাঞ্চল্য। দীর্ঘ সময়ে অভাব-অনটনে থাকা শ্রমিকরা আয়ের পথ খোলায় হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছেন। সবার চোখেমুখে খুশির ঝিলিক। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সবাইকে করোনার টিকার আওতায় আনা হলে স্বাভাবিকভাবেই কারখানা চালু রাখা সম্ভব হবে।
করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে বিধিনিষেধ জারি থাকায় দীর্ঘ সময় ঠাকুরগাঁওয়ের বিসিক শিল্পনগরীর কলকারখানাগুলো বন্ধ রাখা হয়। এতে বেকার হয়ে পড়েন শত শত শ্রমিক। লকডাউন শিথিল হওয়ায় অভাব-অনটনে দিনযাপন করা শ্রমিকরা আবারো কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। কারখানাগুলোতে ফিরেছে কর্মচাঞ্চল্য।
ঠাকুরগাঁও বিসিক শিল্পনগরীতে গড়ে ওঠা সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান রাজ্জাক গ্রুপের জুট মিল গোল্ডেন ফাইবার ইন্ডাস্ট্রিজ। এছাড়া আটা-ময়দা-সুজি, সাবান ও প্লাস্টিকের কয়েকটি কারখানা ছাড়া গড়ে ওঠেনি তেমন কোনো বড় কলকারখানা। তাই স্থানীয় অনেক শ্রমিক জুট মিলে নিয়মিত শ্রম দিয়ে চালান জীবন-জীবিকা।
বর্তমানে বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ায় এই জুট মিলে তিন ভাগে ছয় শতাধিক শ্রমিক নিয়মিত কাজ করছেন। এ থেকে দৈনিক উৎপাদন হচ্ছে পাটের তৈরি ৫ হাজার পিস সুতার রোল ও ৫ হাজার পিস বস্তা। এসব উৎপাদিত সুতা ও বস্তা স্থানীয় বাজারের চাহিদা পূরণ করে পাঠানো হচ্ছে অন্যান্য জেলায়ও।
চালু হওয়ার পর জুট মিলে কাজ ফিরে পেয়ে এখন স্বস্তিতে শ্রমিকরা। কারখানা কর্তৃপক্ষ জানায়, করোনার টিকা প্রদান অব্যাহত থাকলে কলকারখানা খোলা রাখা সম্ভব হবে।
কারখানার এক শ্রমিক মালেকা বেগম বলেন, ‘এতদিন কারখানা বন্ধ থাকায় আমাদের খুব খারাপ অবস্থায় দিন কাটছিল। এখন কারখানা খুলছে, নিয়মিত বেতন পাচ্ছি, ভালোভাবে চলতেছে সংসার।’
আরেক শ্রমিক আজাদ আলী বলেন, ‘কারখানায় আমরা মাস্ক পরে নিয়ম মেনে কাজ করছি। তবে আমাদের যদি টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করে, তাহলে আরো ভালো হয়।’
ঠাকুরগাঁও গোল্ডেন ফাইবার ইন্ডাস্ট্রিজের জেনারেল ম্যানেজার আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘বিধিনিষেধ শিথিলের পর প্রতিষ্ঠান খুলে নতুন করে উৎপাদন শুরু হয়েছে। তবে করোনায় আমাদের লোকসান গুনতে হয়েছে। লকডাউনে যেসব কলকারখানা বন্ধ ছিল, তাদের নেয়া ঋণের সুদ মওকুফ করা হলে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ বাড়বে।’
ঠাকুরগাঁও চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি ও রাজ্জাক গ্রুপের প্রোপাইটার হাবিবুর ইসলাম বাবলু বলেন, ‘করোনাকালীন আমরা কোনো শ্রমিক ছাঁটাই করিনি। এছাড়া অনেক শ্রমিককে আমরা সহযোগিতাও করেছি। এখন আমাদের কারখানা চালু হয়েছে। তাই যেসব ব্যাংক লোনের ইন্টারেস্ট রয়েছে, সেগুলো মওকুফ করলে আমাদের ক্ষতি কম হবে।’
ঠাকুরগাঁও বিসিক শিল্পনগরীর উপব্যবস্থাপক নুরেল হক বলেন, ‘সরকারের পক্ষ হতে কলকারখানাগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হচ্ছে। বিসিকের সকল কারখানা নিয়ম মেনে মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করা ও পুরো কারখানায় জীবাণুনাশক স্প্রে করে তারপরই খোলা হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, ১৯৮৭ সাল থেকে ঠাকুরগাঁও বিসিক শিল্পনগরীর ১৫ একর জমিতে গড়ে ওঠে ছোট-বড় ৫১টি প্রতিষ্ঠান। এর বিপরীতে বর্তমানে জুট মিলেই শ্রমিক সংখ্যা ছয় শতাধিক। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোসহ মোট এক হাজার ৫৩৫ জন শ্রমিক প্রতিদিন এখানে কাজ করছেন।
Leave a Reply