ডেস্ক রির্পোট সমতটঃ প্রতারকেরা যদি তাদের মেধা সঠিক কাজে লাগাতো তাহলে তারা বৈধ উপায়ে ধনী হতে পারতো, জেলে যাওয়া লাগতো না।
সকাল সাড়ে দশটায় আব্দুর রহমান (ছদ্দনাম), বাড়িঃ চুয়াডাঙ্গা, পেশাঃ অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা এর ফোনে রিং বেজে উঠলো। ফোনটা রিসিভ করতেই ফোনের ওপাশ থেকে কর্পোরেট গলায় কর্পোরেট ভঙ্গিতে “আসসালামু আলাইকুম স্যার, শুভ সকাল।” শব্দ এলো। আঃ রহমান সাহেবও ভদ্রলোক, যথাযথভাবে কথা শুরু করলেন। ফোনে ঐ কর্পোরেট জিজ্ঞেস করলেন, “আমি মিস্টার আঃ রহমান সাহেবের সাথে কথা বলছি?” জনাব আঃ রহমান হ্যা বোধক শব্দ জনালেন। এরপর কথোপকথন এরকম-
কর্পোরেটঃ স্যার, আপনার কুরিয়ারটি রিসিভ করার ব্যাপারে কথা বলতে চাচ্ছি, স্যার কুরিয়ারটি কখন রিসিভ করতে পারছেন?
আব্দুর রহমানঃ আমার কিসের কুরিয়ার?
কর্পোরেটঃ স্যার, কুরিয়ারের বক্সটির উপরে নামঃ মিস্টার আব্দুর রহমান, মোবাঃ +৮৮-০১৭১২- , ঠিকানাঃ চুয়াডাঙ্গা, বাংলাদেশ উল্লেখ আছে। এসেছে কোকাকোলা কোম্পানি লিমিটেড, ইউএসএ থেকে।
আব্দুর রহমানঃ আমার ঠিকানায় কি করে এলো??
এরপরই ফোনের ওপাশ থেকে কর্পোরেট সাহেব জনাব আব্দুর রহমানকে বিস্তারিত জানালেন। কোকাকোলা কোম্পানি ১,০০,০০০/- (এক লক্ষ) পাউন্ড পাঠিয়েছে ঠিকই তবে তারা সরকারের ভ্যাট পরিশোধ করেনি। জনাব আব্দুর রহমান সাহেব ঐ টাকার ভ্যাট পরিশোধ করলেই কুরিয়ারটি রিসিভ করতে পারবেন অন্যথায় কুরিয়ারটি ইউএসএতে ফেরত চলে যাবে। জনাব আঃ রহমান ঐ কর্পোরেট সাহেবের দেয়া ব্যাংক একাউন্টে ভ্যাট বাবদ তিনবার সর্বমোট ১,৩৫,০০০/= (এক লক্ষ পয়ত্রিশ হাজার) টাকা পাঠালেন। এতক্ষণে অবশ্য জনাব আঃ রহমান সাহেবও বুঝতে পারলেন তিনি বড় মাপের প্রতারকের পাল্লায় পড়েছেন।
তৎক্ষণাৎ জনাব আঃ রহমান সাহেব বিষয়টি আমাকে ফোনে জানালেন, থানা পুলিশ প্রতারকের একাউন্টে পাঠানো টাকা আটকাতে সক্ষম হলো। বর্তমানে ঐ টাকাগুলো বিজ্ঞ আদালতের আদেশের অপেক্ষায় আছে। বিজ্ঞ আদালতের আদেশ সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক জনাব আঃ রহমান সাহেবকে টাকাগুলো ফেরত দিবেন। থানা পুলিশ কাজ করে চলেছে ঐ প্রতারক (বা প্রতারক চক্র) কে সনাক্ত পূর্বক আইনের আওতায় আনার জন্য।
এবার জানা যাক প্রতারক চক্র জানাব আঃ রহমান সাহেবের নাম-ঠিকানা জানলেন কি করে? উত্তরঃ ট্রুকলার, আইকন, ইমো, হোয়াইটসঅ্যাপ সহ বহু অ্যাপ রয়েছে যাতে আপনার নাম, ঠিকানা ও ছবি ইত্যাদি পাওয়া যেতে পারে।
শিক্ষিত এবং ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত অভিজ্ঞ কর্মকর্তা জনাব আঃ রহমান সাহেব কি করে প্রতারকের খপ্পরে পড়লেন?? সহজ উত্তরঃ প্রতারক চক্র এমনভাবে আপনার মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিবে যে আপনি কোন কিছু ভাবারই সময় পাবেন না।
ঐ প্রতারক এর ত্রুটিগুলো ছিল-
১.ইউএসএ’র মূদ্রার নাম ডলার কাজেই ইউএসএ থেকে কখনো পাউন্ড আসবে না, আসবে ডলার।
২.একদেশ থেকে আরেক দেশে কখনো প্যাকেটে করে টাকা যায় না, দুইদেশের নিয়ম মেনে সে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তত্বাবধানে টাকা পাঠানো যায়।
৩.পাঠানো টাকা থেকে সরকার ভ্যাট কেটে নেয়। কাজেই প্রাপককে আলাদা করে কোন ভ্যাট পরিশোধ করতে হয় না। এর সবগুলোই জনাব আব্দুর রহমান সাহেব এর বিবেচনা করা উচিৎ ছিল।
ভবিষ্যতের প্রতারকেরা হয়তো উপরের ত্রুটিগুলো সংশোধন করে নিবেন তবে তারা যাই করুক, অপরাধী অপরাধ সংগঠনের সময় কিছু না কিছু ক্লু রেখে যাবেন। সেই ক্লুগুলোই হচ্ছে আইডেন্টিফাইয়্যাবল মার্ক অর্থাৎ সেগুলো দিয়েই আমরা অপরাধী সনাক্ত করবো। উপরে বর্ণিত প্রতারক (বা প্রতারক চক্র) আইনের আওতায় আসবে ইনশাআল্লাহ।
প্রতারকরা যদি তাদের বুদ্ধি সঠিক কাজে লাগাতো তাহলে তারা বৈধ উপায়ে ধনী হতে পারতো, জেলে যাওয়া লাগতো না।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানা এলাকায় যেকোনো অপরাধমূলক কাজ প্রতিরোধের জন্য আমাদের জানান।
ডিউটি অফিসারঃ ০১৩২০-১৪৮১৭৪,
অফিসার ইনচার্জঃ ০১৩২০-১৪৮১৬৯,
জাতীয় জরুরি সেবাঃ ৯৯৯.
Leave a Reply