জেমস রহিম রানা ও মনিরুজ্জামান মনির
যশোরের সদর উপজেলার ইউপি নির্বাচনে নৌকা লাঙ্গলের লড়াই জমে উঠেছে । বসুন্দিয়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে কাগজে কলমে পাঁচজন প্রার্থী থাকলেও মূলত প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনজন। নির্বাচন যদি সুষ্ঠ হয় তাহলে সব প্রার্থীই বিজয়ী হবেন এমন আশাবাদ ব্যাক্ত করছেন। তবে প্রার্থী এবং ভোটাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হলে এই ইউনিয়নে নৌকা এবং লাঙ্গলের মধ্যে দ্বি-মুখী লড়াই হবে ।
আগামী ৫ জানুয়ারি সদর উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থীরা এসব ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন। এরমধ্যে বসুন্দিয়া ইউনিয়নে রয়েছে জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী তুহিন খান। এছাড়া শক্ত অবস্থানে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রিয়াজুল ইসলাম খান। মূলত এই দুই প্রার্থীর মধ্যেই জমবে নির্বাচনী লড়াই। এছাড়া এই ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন শেখ শাহাবুদ্দিন, নুরুজ্জামান খান ও এসকে মমিনুল ইসলাম আমিনুল।
জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী তুহিন খান জানান, তিনি কর্মীদের নিয়ে গ্রামের প্রতি বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। এতে ব্যক্তিগতভাবে তাকে কেউ বাধা না দিলেও তার কর্মী সমর্থকরা নানাবিধ হুমকি ধামকির মধ্যে রয়েছেন। তিনি বলেন, এই ইউনিয়নে অবিরত বহিরাগত লোকজনের আনাগোনা লক্ষ করা যাচ্ছে। এতে সাধারণ ভোটাররা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে। এমনিতেই বেশ কয়েকটি কেন্দ্র মারাত্মক ঝুকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করে নির্বাচন অফিসে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। তার ওপর বহিরাগতদের আনাগোনা এবং তাদের নিয়ে মোটরসাকেলযোগে শোডাউন সাধারণ ভোটারদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। ফলে নিরপেক্ষ ভোট জনগন দিতে পারবে কি না তা নিয়ে যথেষ্ঠ সন্ধিহান। ভোটাররা যদি ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারে তবে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে দ্বিগুন ভোটে তিনি জয়লাভ করবেন বলে আশা করছেন জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী তুহিন খান।
ঘোড়া প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিনুল ইসলাম মমিনুল জানান, নৌকার কর্মীদের ভয়ভীতির কারণে আমরা মাঠে ভোট চাইতে পারছিনা। আমাদের যারা পোলিং এজেন্টের দায়িত্ব পালন করবে তাদেরকে অব্যাহত হুমকি দেয়ায় আমরা এজেন্ট খুঁজে পাচ্ছি না। তিনি বলেন, শহরের একজন আওয়ামী লীগ নেতা প্রকাশ্য সভা করে বলে গেছেন নৌকায় ভোট দিলে কেন্দ্রে যাবেন অন্যথায় কেন্দ্রে যাবেন না। এসব বিষয়ে নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিতভাবে জানিয়েও কোন প্রতিকার পাইনি। আমি নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই।
নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রিয়াজুল ইসলাম খান রাসেলের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙঘন, ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শণসহ বহিরাগতদের নিয়ে মোটর সাইকেল যোগে অবৈধ শো ডাউনের এন্তার অভিযোগ রয়েছে। গতকাল শুক্রবার তার সমর্থনে শতাধিক মোটরসাইকেল নিয়ে কর্মী সমর্তকদের শোডাউন দিতে দেখা গেছে।
এব্যাপারে নৌকার প্রার্থী রিয়াজুল ইসলাম খান রাসেল বলেন, আমরা ভোট চাইতে জনগনের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছি। কিছু কিছু কর্মী ভাড়াকরা মোটরসাইকেল যোগে ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন। তবে সেটি শোডাউন নয়। তাছাড়া আমি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। ভোটাররা কেন্দ্রে গিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবে। বাধা দেয়ার বা ভয়ভীতি দেয়ার প্রশ্নই আসেনা।
এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার কামরুজ্জামান বলেন, আমাদের কাছে কেউ এখনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি । লিখিত অভিযোগ ছাড়া আমাদের কিছুই করার নেই। লিখিত অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে গ্রামে ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ ইউনিয়নে নির্বাচনী আচরণবিধি মানছেন প্রার্থীরা। গতকাল শুক্রবার বসুন্দিয়া ইউনিয়নের ঘুনি গ্রামে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার পদপ্রার্থী বৈদ্যুতিক পাখা মার্কার প্রার্থী রফিকুল ইসলাম ও টিউবওয়েল প্রতীকের প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ শতাধিক মোটরসাইকেল নিয়ে ৯ নম্বর ওয়ার্ডে শোডাউন দিয়েছে। যা পুরোটাই নির্বাচন বিধিমালার বাইরে।
এবিষয়ে কথা হয় বৈদ্যুতিক পাখা মার্কার রফিকুল ইসলামের সাথে । তিনি বলেন, শুধু আমি নই, প্রত্যেক প্রার্থী মোটরসাইকেল শোডাউন দিয়ে যাচ্ছে। তাকে নির্বাচনী বিধিমালা দেখালে তিনি বলেন, আমি ঘুনির স্কুল মাঠে প্রোগ্রাম করে শেষ করে দিব । এর কিছুক্ষণ পরেই তিনি শতাধিক মোটরসাইকেল নিয়ে শোডাউনে বের হয়েছেন। একই ওয়ার্ডের টিউবওয়েল প্রতীকের প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ অনুরুপ মোটরসাইকেলে শোডাউন করেন। এ বিষয়ে স্থানীয় লোকজন জানান, মোটরসাইকেল শোডাউনে অর্ধেকের বেশি লোকই বহিরাগত। শোডাউনে ব্যবহৃত অধিকাংশ মোটরসাইকেলগুলো নড়াইল থেকে ভাড়া করে আনা হয়েছে ।
লেবুতলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলেও জমে উঠেছে সেখানকার মেম্বার নির্বাচন। এখানে প্রার্থীরা নির্বাচনী বিধি নিষেধ অমান্য করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, দোকানের দেওয়ালে বা স্কুলের পাঁচিলে পোস্টার মারার কাজে মেতে উঠেছে। ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বীর নারায়ণপুর গ্রামের স্কুলের মেইন গেটের রং পরিবর্তন করে ফেলেছে প্রার্থীরা। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক আলতাফ হোসেন জানান, গতবছর একবার নিষেধ করে আমি বিপদে পড়েছিলাম। যেহেতু আমার বাড়ি এই গ্রামে সেজন্য আমি এখনো কোনো কিছু বলিনি। তিনি বলেন, আমার নতুন রং করা গেট পুরোটাই নষ্ট করে ফেলেছে , যদি নিষেধ থাকে তাহলে তারা কি এ বিষয়ে জানে না।
Leave a Reply