মোঃ রাসেল সরকার//
ঢাকার শাহজাহানপুরে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু এবং কলেজছাত্রী সামিয়া আফরিন প্রীতি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার চার আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের হেফাজত পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।
রোববার ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান নূর শুনানি শেষে রিমান্ডের এই আদেশ দেন।
তারা হলেন- সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মাহবুবুর রহমান ওরফে টিটু, জুবের আলম খান ওরফে রবিন, আসিফুর রহমান সোহেল এবং খাইরুল ইসলাম।
এর আগে এই মামলায় সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। নতুন চারজনকে নিয়ে এখন গ্রেপ্তারের সংখ্যা দাঁড়াল ১১।
নতুন চারজনকে গ্রেপ্তারের পর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মোহাম্মদ ইয়াসিন শিকদার রোববার আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের জন্য হেফাজতে চেয়ে আবেদন করেন।
আসামিদের পক্ষে এহসানুল হক সমাজী, ফিরোজুর রহমান মন্টুসহ আরও কয়েকজন আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন।
সমাজী বলেন, “কেস ডকেট উপস্থাপন না করে রিমান্ড শুনানির ওপর উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। যেহেতু এ মামলার আজকের শুনানিতে ওই কাগজপত্র উপস্থাপন করা হয়নি, সেহেতু আজকে প্রার্থিত রিমান্ড আবেদনের ওপর কোনো আদেশ দেওয়া ন্যায়সঙ্গত হবে না।”
বিচারক তখন বলেন, “আপনি শুনানি করুন। পরে কেস ডায়েরি নিয়ে আসা হবে।”তখন আইনজীবী সমাজী বলেন, “তাহলে শুনানিও পরে হবে।” বিচারক এ বক্তব্য গ্রহণ না করে শুনানি নিতে থাকেন।
সমাজী শুনানি না করায় পরে রিমান্ড বাতিল চেয়ে ফিরোজুর রহমান মন্টু শুনানি শুরু করেন।
তিনি বলেন, “শুটার মাসুম, সুমন শিকদার ও নাসিরুদ্দিন মানিক ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। তদন্ত সংস্থা বলছে যে তারা নাকি আসামি রবিনের নাম হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট বলে অভিহিত করেছে। প্রকৃতপক্ষে তারা জুবের আলম খান রবিনের নাম বলেনি। শুধু আসামিদের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য যাকে-তাকে এ মামলায় ধরে নিয়ে আসা হচ্ছে, যা আইনের পরিপন্থি।”
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক সঙ্গে সঙ্গে আদেশ না দিয়ে এজলাস ছাড়েন। পরে খাসকামরা থেকে রিমান্ডের আদেশ দেন।শুনানির আগে আসামি পক্ষের লোকজন ডিবিসি টেলিভিশনের ক্যামেরাপারসন আল আমিনের ওপর চড়াও হয়ে তাকে কিল-ঘুষি মারে এবং ক্যামেরা ভাংচুর করে।
আসামিদের ছবি তোলা ও ভিডিও করায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে এই কাজ করে বলে উপস্থিত সাংবাদিকরা জানান। বিষয়টি নিয়ে কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ করা হলে আদালত প্রাঙ্গণের সিসি ক্যামেরার ভিডিও সংগ্রহ করে পুলিশ। তা দেখে আসামি শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস পুলিশ দিয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিবিসি প্রতিবেদক লিটন মাহমুদ।
গত ২৪ মার্চ রাত ১০টার দিকে রাজধানীর শাজাহানপুরে দুর্বৃত্তদের এলোপাথাড়ি গুলিতে নিহত হন মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু।
ওই সময় টিপুর গাড়ির পাশে রিকশায় থাকা কলেজছাত্রী সামিয়া আফনান প্রীতি গুলিতে নিহত হন।টিপুর গাড়িচালক মুন্নাও গুলিবিদ্ধ হন। এ ঘটনায় টিপুর স্ত্রী ফারজানা ইসলাম ডলি থানায় মামলা দায়ের করেন। আগামী ৩১ অগাস্ট আদালতে এ মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন জমার তারিখ রয়েছে।
এ হত্যা মামলার অন্যতম সন্দেহভাজন সুমন শিকদার মুসা গত ১২ মে ওমানে গ্রেপ্তার হওয়ার পর ৩১ জুলাই তাকে দেশে ফিরিয়ে আনে পুলিশ।
এর আগে মুসার ভাই সালেহ শিকদার এবং মতিঝিল থানার ১০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুকসহ চারজনকে র্যাব গত ২ এপ্রিল গ্রেপ্তার করে।
এছাড়া মাসুম মোহাম্মাদ আকাশ এবং আরফান উল্লাহ দামাল নামে আরও দুজন গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়।
তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতা ওমর ফারুককে হত্যাকাণ্ডের ‘পরিকল্পনাকারী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে র্যাব।
Leave a Reply