সাতক্ষীরা প্রতিনিধি; করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার সারাদেশে সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করেছে। এতে করে বিপাকে পড়েছেন জেলার পশু খামারিরা। বিপাকে পড়া খামারিদের কথা চিন্তা করে বুধবার থেকে শুরু হয়েছে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পশুরহাট। তবে এক্ষেত্রে ব্যবসায়ী ও পশু বিক্রেতাদের অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে। জেলায় লকডাউন ভঙ্গ করে পশুর হাট বসানো চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নিবে প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এমনটি জানানো হয়েছে।
তবে ভিন্ন কৌশলে সরকার ঘোষিত লকডাউন উপেক্ষা করে কোথাও কোথাও বসছে গরুর হাট। মঙ্গলবার সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আবাদের বাজারে বিক্ষিপ্তভাবে এ হাট বসানোর অভিযোগ ওঠে বাজার কমিটি ও হাট ইজারাদারদের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে এলাকার সচেতন মহলের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
তবে বাজার ও হাট ইজারাদার কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে, স্থানীয় কিছু জনপ্রতিনিধি ও সরকার দলীয় নেতাদের ইন্ধনে চলছে এ হাট। তবে বিক্ষিপ্তভাবে এ গরুর হাট বসানো সম্পর্কিত বিষয়ে জড়িত নন বলে দাবি করেন তারা।
এদিকে গরু ব্যবসায়ীদের দাবি, পেটের টানে সরকার ঘোষিত লকডাউন অমান্য করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। কারণ হিসেবে বলছেন, গতবছর অনলাইনে গরু কেনাবেচার সুবিধা ছিলো। এবার সেটাও চালু করেনি জেলা প্রশাসন। তাহলে আমরা কোথায় যাবো? আমাদের বউ, বাচ্চার মুখে খাবার তুলে দেওয়াই এখন কষ্টকর হয়ে পড়েছে। প্রশাসন আমাদেরকে জরিমানা করছে লকডাউন অমান্য করে গরুর হাট বসানোর জন্য। তবে আমরা কেন লকডাউন অমান্য করছি? সেটা তারা জানতে চান না। অনেক সরকারি কর্মকর্তা লকডাউনে ছুটি কাটিয়েও বেতন পাচ্ছেন। আমরাতো আমাদের বউ, বাচ্চার মুখে খাবার তুলে দিতে পারছিনা। এসময় তারা আরও বলেন, একেতো আমাদের সংসার চলছে না, তার উপর প্রশাসনিক কর্মকর্তা ৫শ’ টাকা থেকে কয়েক হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করছে।
দেবহাটা উপজেলার কোমপুরের খামারি আসাদুজ্জামান বলেন, এবার কোরবানির আশায় ১৬টি গরু লালন-পালন করেছি। এখন করোনা নিয়ে খুব আতঙ্কের মধ্যে আছি। তাছাড়া প্রতিদিন খামারে প্রায় কয়েক হাজার টাকা খরচ হয়। যদি ঈদে গরু বিক্রি না হয় তাহলে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।
একই উপজেলার খামারি দেবপ্রসাদ ঘোষ দেবু বলেন, গরু মোটাতাজাকরণ করে আতঙ্কে আছি। তিনি বলেন, আমরা যারা খামারি, তারা সারাবছর গরু মোটাতাজাকরণ করে কোরবানির ঈদের অপেক্ষায় থাকি। ৩-৪ লাখ টাকা বিক্রির আশায় গরু পালন করি। যদি সেগুলো কোরবানিতে বিক্রি না হয় তাহলে আমরা নি:স্ব হয়ে যাবো।
এদিকে খুলনা বিভাগের অন্যতম বৃহৎ পারুলিয়া গরুহাটের ইজারাদার জেলা পরিষদ সদস্য আলফেদৌস আলফা জানান, করোনায় কারণে গরুহাট বন্ধ রয়েছে। এতে প্রতি হাটে আমার কয়েক লক্ষাধিক টাকা লোকসান হচ্ছে। প্রান্তিক কৃষক বা অসহায় নারীরা গরু পালন করে ঈদের হাটে বিক্রি করে লাভবান হয়। কিন্তু করোনার কারণে প্রশাসন হাট বন্ধ করে রাখায় উভয় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ন কবির বলেন, জেলায় কোনপ্রকার গরুর হাট বসবে না। কোন জনপ্রতিনিধি, বাজার কর্তৃপক্ষ, হাট ইজারাদারসহ যেকোনো রাজনৈতিক দলের নেতারা যদি হাট বসানোর চেষ্টা করেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি গরু খামারিসহ ব্যবসায়ীদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বুধবার থেকে জেলা প্রশাসকের ব্যবস্থাপনায় ‘সাতক্ষীরা হাট’ নামে অনলাইন হাটে পশু ক্রয় বিক্রয়ের কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং তারা অনলাইনের মাধ্যমে গরু বিক্রয়ের নিবন্ধন করতে পারবেন। তাই আতঙ্কের কারণ নেই। হাট বন্ধ থাকলেও অনলাইনে এবার পশুর কেনাবেচার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে খামারিদের বাড়তি খরচ কমবে। অনলাইনে পশু কিনতে ফেসবুক পেইজে বিভিন্ন দামের পশুর বিবরণ দেওয়া আছে। পছন্দ মতো পশু কেনা বেচা করা যাবে। জেলার সাতটি উপজেলা প্রশাসন এবং প্রাণিসম্পদ অফিসের উদ্যোগে অনলাইনে কোরবানির পশুর হাট শুরু হয়েছে।
Leave a Reply