স্বৈরাচারের পতন হলেও ষড়যন্ত্র থেমে নেই, সজাগ থাকতে হবে সকলকে#
কলারোয়ার জনসমাবেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান
সিনিয়র স্টাফ রির্পোটার আসাদ (সাতক্ষীরা) : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, স্বৈরাচারের পতন হলেও ষড়যন্ত্র থেমে নেই। কিছু রাজনৈতিক দল বা সংগঠন একটি প্রতিবেশি দেশের ফাঁদে পা দিয়েছে এই রাজনৈতিক দলগুলো। তারা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষের এজন্য সজাগ থাকতে হবে। এই ষড়যন্ত্র দেশের ভিতরে ছিলো, দেশের বাইরে ছিলো। তাদের সেই ষড়যন্ত্র এখনো অব্যাহত আছে। এই দেশের মানুষ যদি গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পায় তবে রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী হতে পারবে। দেশের সকল মানুষ যেমন অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হতে পারবে তেমনি মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারবে। তখন ষড়যন্ত্রকারীদের সব প্লান ভেস্তে যাবে। দেশের ভিতরে এবং বাইরে যারা কলকাঠি নাড়ছে তারা চায়না দেশের মানুষ গণতন্ত্র ফিরে পাক। তিনি বলেন, এদেশের মানুষ একাত্তর সালে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে নব্বই এর আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছে এবং এদেশের মানুষ পৃথিবীর অন্যতম স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছে। স্বৈরাচারকে এদেশ থেকে বিতাড়িত করে দিয়েছে। রোববার বিকেল ৫ টায় সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলা ও পৌর বিএনপি আয়োজিত বিশাল জনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। তারেক রহমান বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়া ও দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার রাজনীতি হলো বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটানো। তিনি বলেন, প্রিয় ভাই-বোনেরা, আজ এই লক্ষ মানুষের সমাবেশে আমরা দৃঢ়ভাবে শপথ গ্রহণ করি- সকল ষড়যন্ত্রের বিষদাঁত ভেঙে দিয়ে আমরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এদেশের হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করবো। যতক্ষণ পর্যন্ত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার না হবে ততক্ষণ আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ।
তিনি হাবিবুল ইসলাম হাবিবের নাম উল্লেখ করে বলেন, বিএনপির সময়ে যে উন্নয়ন হয়েছে তা আপনারা দুহাত তুলে সেই উন্নয়নের সাক্ষ্য দিয়েছেন। তারেক রহমান বলেন, একযুগেরও বেশি সময় ধরে আপনারা যেভাবে অত্যাচারিত নির্যাতিত হয়েছেন তা সারাদেশের মতো কলারোয়ার মানুষ এর সাক্ষী। তিনি কলারোয়া, তালা ও সাতক্ষীরা অঞ্চলের যে সম্ভাবনা আছে সেগুলো কাজে লাগিয়ে জীবন-জীবিকা উন্নত করার বিষয়ে বলেন, এ অঞ্চলে উৎপাদিত সুস্বাদু ন্যাংড়া আম হিমাগারে সংরক্ষণের মাধ্যমে তা সারাদেশের পাশাপাশি বিদেশেও সরবরাহ করতে পারবেন। তাছাড়া, এখানে আমের জুস, চাটনি ও আচার তৈরির কারখানা প্রতিষ্ঠার কথাও তিনি বলেন। যেখানে নারীসহ বেকারদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। তিনি কলারোয়া এলাকার মাটির তৈরি টালি উৎপাদন প্রসঙ্গে বলেন, এই টালি বিদেশে মানুষ ঘরে ব্যবহার করে। বিএনপি চায়, উন্নয়নের জন্য এই টালির সম্ভাবনা কাজে লাগাতে। টালি উৎপাদনে সরাকারি সহযোগিতা দিলে তা ব্যাপক বিস্তার লাভ করবে। পৃথিবীব্যাপী তা ছড়িয়ে পড়বে। এছাড়া তিনি সুন্দরবনের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো, চিংড়ি ও মাছের ঘেরে টেকসই ভেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সুন্দরবন সংলগ্ন মুন্সিগঞ্জের সাথে সড়ক উন্নয়নের কথাও তুলে ধরেন। এতে করে জীবিকা বাড়বে, বাড়বে জীবনের মান। তিনি আরও বলেন, বিএনপি উন্নয়ন ও উৎপাদনের রাজনীতি করে। জনগণের সরকারই একমাত্র জনগণের চিন্তা করে, কাজ করে। তিনি আবারও খাল খনন কার্যক্রম শুরু করার কথা উল্লেখ করে বলেন, বন্যামুক্ত অবস্থা ও পানি সংরক্ষণ এর মাধ্যমেই হতে পারে। পরিশেষে তিনি বলেন, জনগণের রাজনৈতিক অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত বিএনপির আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। প্রায় ২৫ মিনিটের এই ভাষণ উপস্থিত লক্ষাধিক জনতা ভক্তিভরে শোনেন এবং তারেক রহমানকে অভিবাদন জানান। তারেক জিয়াও লক্ষ জনতাকে অভিনন্দন জানান। এর আগে বিশাল জনসমাবেশ ও গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানের সভাপতি সদ্য কারামুক্ত বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিব বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে উল্লেখ করে সকলের পাশে থাকায় কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে বলেন, আমি জানতাম না আবার আপনাদের মাঝে ফিরে আসতে পারবো কী-না। কিন্তু আপনাদের দোয়া ও ভালবাসায় ফিরে আসতে পেরেছি। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আবু সাঈদ, মুগ্ধসহ সকল শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। তিনি তাঁর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে স্বৈরাচার হত্যা করতে চেয়েছিল। দেশনেত্রী পালিয়ে যাননি, আমিও পালিয়ে যায়নি। তিনি শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা মামলাকে মিথ্যা মামলা আখ্যায়িত করে বলেন, সাহস নিয়ে বীরের মতো গিয়েছিলাম, বীরের মতোই ফিরে এসেছি। ওরা বিএনপির ৪ নেতাকে জেলের মধ্যে হত্যা করেছে। আমাদের দু:সময়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাদের নিয়মিত খোঁজ নিতেন। তিনি আরো বলেন, স্বৈরাচার সরকার খালেদা জিয়া ও শহীদ জিয়া নামাংকিত কলেজর নাম মুছে দিতে চেয়েছিলো। তারেক জিয়া নামে প্রতিষ্ঠিত স্কুলটির এমপিওভুক্তি দেয়নি তারা। তিনি কলারোয়ার এই গণসংবর্ধনাকে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ জনসমাবেশ হিসেবে উল্লেখ করেন। একই অনুষ্ঠানে কারামুক্ত হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা মামলায় মুক্ত হওয়া বিএনপির নেতৃবৃন্দকে ফুলেল সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এসময় ৪ শহীদ পরিবারদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন ও তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, রংপুর বিভাগীয় বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক, খুলনা বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক বাবু জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, বিএনপির কার্যনির্বাহী সদস্য সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী আলাউদ্দীন, বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ডাক্তার শহিদুল আলম, সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিবের সহধর্মিণী সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহানারা পারভীন বকুল, জেলা বিএনপি নেতা তারিকুল হাসান, আইনুল ইসলাম নান্টা, কলারোয়া উপজেলা বিএনপির সহ সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুর রশিদ মিয়া, বিএনপির মুখপাত্র অধ্যক্ষ রইচ উদ্দীন, বিএনপি নেতা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রকিব মোল্লা, আলহাজ্ব শেখ কামরুল হোসেন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফ হোসেন, শেখ শরিফুজ্জামান তুহিন, শেখ আব্দুল কাদের বাচ্চু, আলহাজ্ব শেখ তামিম আজাদ মেরিন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম, গোলাম রসুল, জহুরুল ইসলাম, এম এ হাকিম সবুজ, কে এম আশরাফুজ্জামান পলাশ,সালাউদ্দিন পারভেজ, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মমতাজুল ইসলাম চন্দন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ইব্রাহিম হোসেন, মফিজুল ইসলাম মফি, নজরুল ইসলাম, যুবদল নেতা তাওফিকুর রহমান সঞ্জু, খালিদ মঞ্জুর রোমেল, আরিফুল আনম রিপন, হাসান, ময়না, সহিদুল, খোকন, আলতাফ হোসেন, রাকিব প্রমুখ।
Leave a Reply