২০১৯ সালে কলারোয়ায় দেয়াড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১৬ লাখ টাকা উৎকোচের
বিনিময়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়!
প্রায় ৩ বছর পর নিয়োগ বৈধ করতে পরিচালনা কমিটির সভাপতিরদৌড়ঝাপ !
# প্রধান শিক্ষকের দাবি নিয়োগ বৈধ..
# নিয়োগের পর থেকে তিনি প্রধান শিক্ষক পদ মর্যাদার বেতন পায়নি..
# বেতন পাচ্ছেন সহকারি প্রধান শিক্ষক হিসেবে..
নিজস্ব প্রতিবেদক : নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত হওয়ার সুযোগে সহকারি প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত
প্রধান শিক্ষক) এখন নিজেকে প্রধান শিক্ষক দাবি করে বেতন উত্তোলনের আবেদন
করার অভিযোগ উঠেছে সাতক্ষীরার কলারোয়ার দেয়াড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক (সহকারি প্রধান শিক্ষক) মো: আব্দুল বারীর
বিরুদ্ধে। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতিকে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে
ম্যানেজ করে তিনি নিজেকে প্রধান শিক্ষক দাবি করছেন বলে জানিয়েছেন
সংশ্লিষ্ঠ বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও অবিভাবকরা।
এরআগে ২০১৯ সালে উক্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের শুন্য পদে নিয়োগের
জন্য বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতির মনোনিত সহকারি প্রধান শিক্ষক
আব্দুল বারীকে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের
হলরুমে নিয়োগ বোর্ড গঠন করলেও পরিচালনা কমিটির সভাপতিকতৃক পরীক্ষার আগে
চার প্রার্থীর প্রবেশপত্র ছিনিয়ে নেয়া এবং উক্ত নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও সাতক্ষীরা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা
কর্মকর্তা নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে তাঁরা অবহিত নয় জানানোর পর দুর্নিতী ও
অনিয়েমের অভিযোগে মাধ্যমিক ও উক্ত মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের খুলনা
অঞ্চলের উপ পরিচালক উক্ত (প্রধান শিক্ষক) নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেয়াড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক
জানান, দীর্ঘদিন প্রধান শিক্ষকের পদ শুন্য থাকলেও বিদ্যালয়ের পরিচালনা
কমিটির সভাপতি কৌশলে সহকারি প্রধান শিক্ষক আব্দুল বারীকে ভারপ্রাপ্ত
প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়ীত্ব প্রদান করেন। সম্প্রতি তিনি পুনরায়
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় পুনরায় স্থগিতকৃত
পুর্বের অবৈধ নিয়োগ বৈধ ও সহকারি প্রধান শিক্ষক আব্দুল বারীকে প্রধান
শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদানের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন।
তারা আরো জানান সহকারি প্রধান শিক্ষক আব্দুল বারীর নিকট থেকে ১৬ লাখ টাকা
উৎকোচ নিয়েছেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য
মো: মতিয়ার রহমান। যদিও নিয়োগ সম্পন্ন না হওয়ায় গত বছর সহকারি প্রধান
শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক) আব্দুল বারী পরিচালনা কমিটির সভাপতির
নিকট টাকা ফেরত চাইলেও তিনি উক্ত টাকা বিভিন্ন স্থানে দেয়া হয়েছে এবং
তাকে প্রধান শিক্ষক করা হবে বলে আশ্বাস প্রদান করেন।
খোজনিয়ে জানাগেছে, অবৈধ নিয়োগ স্থগিত হওয়ার পরও বিদ্যালয়ের পরিচালনা
কমিটির সভাপতি মতিয়ার রহমান প্রধান শিক্ষক হিসেবে আব্দুল বারীকে প্রধান
শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ বৈধ করার জন্য এবং প্রধান শিক্ষক হিসেবে বেতন ছাড়
করার জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন
কিন্তু তিনি রাজি না হওয়ায় পরিচালনা কমিটির সভাপতি অবৈধ ভাবে মাধ্যমিক
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা আদালতে অভিযোগ (নং-২৭/২০) দায়ের
করেন। যদিও সুতচুর মতিয়ার রহমান মিথ্যা অভিযোগের কারনে নিজে বিপদে পড়ার
আশংকায় জুলাই মাসে আদালত থেকে অভিযোগটি প্রত্যাহার করে নেয়।
স্থানীয় এলাকাবাসী ও বিদ্যালয়ের অবিভাবকরা জানান, স্থানীয় প্রভাবশালী
ব্যাক্তি হওয়ায় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মতিয়ার রহমান ১৬ লাখ টাকার
বিনিময়ে উক্ত নিয়োগ বৈধ করতে বিভিন্ন দপ্তর ও প্রভাবশালী ব্যাক্তিদের
নিকট যোগাযোগ করেও কলারোয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল
হামিদকে ম্যানেজ করতে পারেননি। সম্প্রতি তিনি পুনরায় বিদ্যালয়ের সভাপতি
মনোনিত হওয়ার পর থেকেই আবারও স্থগিতকৃত নিয়োগকে বৈধ করার জন্য মাধ্যমিক
শিক্ষা কর্মকর্তাকে নানা ভাবে চাপ প্রয়োগ করছে। তারা আরও জানান, দীর্ঘদিন
বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শুন্য থাকায় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত
হচ্ছে। যার কারনে অবিভাবকরা নতুন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিদ্যালয়ে যোগত্যা
সম্পন্ন প্রধান শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে সভাপতিকে জানালেও তিনি গুরুত্ব
দিচ্ছেন না। এসব অবিভাবকদের দাবি, সভাপতির মনোনিত প্রার্থী একই
বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক আব্দুল বারীর একাডেমিক (তৃতীয়
বিভাগ/শ্রেণী) সমস্যা থাকায় নতুন বিজ্ঞপ্তিতে তিনি আবেদন করতে পারবেন না,
যার কারনে পরিচালনা কমিটির সভাপতি পূর্বের স্থগিতকৃত অবৈধ নিয়োগ উৎকোচের
বিনিময়ে বৈধ করার জন্য দিনভর ছুটে বেড়াচ্ছেন। যদিও স্কুলে শিক্ষার্থীদের
লেখা-পড়ায় সমস্য হলেও সে বিষয়ে তিনি গুরুত্ব দিচ্ছেন না। অবিভাবকরা
সভাপতির অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ এবং বিদ্যালয়ে একজন দক্ষ ও যোগত্যা সম্পন্ন
প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রদানে সংশ্লিষ্ঠ উর্ধতন কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা
করেছেন।
দেয়াড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক (সহকারি প্রধান
শিক্ষক) মো: আব্দুল বারী জানান, নিয়াগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়নি। আমি
বিদ্যালয়ের নিয়োগ প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। ২০১৯ সালে নিয়োগের পর থেকে
প্রধান শিক্ষক পদে বেতন পাচ্ছেন কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে
তিনি জানান, কাগজপত্রে সামান্য ভুলের কারনে এখনও হয়নি তবে সেগুলি
সংশোধনের পর বেতন পাবেন বলেন জানান।
এবিষয়ে জানতে চাইলে দেয়াড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো:
মতিয়ার রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ
থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।
কলারোয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: আব্দুল হামিদ ঘটনার সত্যতা
নিশ্চিত করে জানান, পূর্বের নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে বিদ্যালয়ের সভাপতি বা
অন্যকেউ আমাকে অবহিত করেননি। বিদ্যালয়ের সভাপতি অফিসে একাধিকবার এসেছিলো,
আমি প্রধান শিক্ষক নিয়োগের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়ার জন্য বলেছি।
পুর্বের নিয়োগ অবৈধ ও স্থগিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাতক্ষীরা জেলা
মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনিও পত্রিকায় বিজ্ঞাপন
দিয়ে নিয়োগ সম্পন্নের জন্য বিদ্যালয়ের সভাপতির সাথে কথা বলবেন বলে জানান।
প্রসংগত; ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) বেলা সাড়ে ১২টায় সাতক্ষীরা
জেলা পরিষদের সামনে থেকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার আড়াই ঘন্টা আগে
চার প্রার্থীর প্রবেশ পত্র কৌশলে নিয়ে বাড়ীতে পাঠিয়ে দেয় বিদ্যালয়
পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো: মতিয়ার রহমান। পরে মোটা অংকের অর্থ লেনদেন ও
অনিয়মের অভিযোগে উক্ত নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। যদিও পরিচালনা কমিটির
সভাপতি মো: মতিয়ার রহমান প্রবেশ পত্র নেয়ার বিষয়টি অস্বিকার করেন।
এসময় অংশগ্রহন করতে না দেয়া কলারোয়া উপজেলার হিজলদী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের
সহকারি প্রধান শিক্ষক মো: হযরত আলী, লাঙ্গলঝাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের
সহকারি প্রধান শিক্ষক বজলুর রহমান, ভাদিয়ালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি
প্রধান শিক্ষক মো: বদরুজ্জামানসহ কয়েকজন প্রার্থী প্রধান শিক্ষক নিয়োগে
অনিয়ম ও দুর্নিতীর অভিযোগ তুলে সাংবাদিকদের জানান, উপজেলার দেয়াড়া
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি
প্রকাশের পর সকল যোগ্যতা থাকায় আমরা চার সহকারি প্রধান শিক্ষক, তিনজন
প্রধান শিক্ষকসহ মোট ৯জন প্রার্থী সভাপতি বরাবর আবেদন করি। এরমধ্যে নিয়োগ
পরীক্ষার আগেই উক্ত বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি মতিয়ার রহমানের
সমর্থনে (মোটা অংকের টাকা নিয়ে) দেয়াড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি
প্রধান শিক্ষক আব্দুল বারীকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদানে গোপন
সিদ্ধান্ত হয়। আবেদনকারী সহকারি প্রধান শিক্ষক মো: বদরুজ্জামান বলেন,
প্রধান শিক্ষক নিয়োগে সংশ্লিষ্ঠ কতৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৪ নভেম্বর
(বৃহস্পতিবার) বেলা ৩টায় সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ হল রুমে প্রধান শিক্ষক
নিয়োগ পরীক্ষার জন্য তারিখ নির্ধারন করা হয়। বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর)
পরীক্ষায় অংশ গ্রহনের জন্য আমরা চার জন প্রার্থী বেলা সাড়ে ১২টায়
সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের সামনে পৌছালে সেখানে উপস্থিত থাকা দেয়াড়া
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো: মতিয়ার রহমান আমাদের
প্রবেশ পত্র দেখতে চাই। এসময় পরীক্ষার প্রবেশ পত্র সভাপতির নিকট দেয়া হলে
তিনি সেগুলি নিজের কাছে রেখে বলেন, একই বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক
আব্দুল বারীকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হবে, আপনারা বাড়ীতে ফিরে
যান। এঘটনার পর প্রবেশ পত্র ফেরত চাইলেও তিনি দিতে অস্বীকৃতি জানায় পরে
উক্ত চার প্রার্থী এধরনের দুর্নিতী ও অনিয়মের প্রতিকার ও তাদের
প্রবেশপত্র ফেরত, সঠিক ভাবে পরীক্ষা গ্রহনের মাধ্যমে নিয়োগের জন্য জেলা
প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ঠ উর্ধতন কতৃপক্ষের হস্থক্ষেপ কামনা করেন।
মনিরুল ইসলাম মনি, তাং- ১৪/৮/২০২২
Leave a Reply