“
জেলা প্রতিনিধিঃ গত ২০/০৬/২০২১ইং তারিখ হামার কুড়িগ্রাম পেজে”সাব-রেজিস্ট্রার রাজারহাট এর বিরুদ্ধে ভুয়া দলিল সম্পাদন ও নিয়ম বহির্ভূত অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটি আমার দৃষ্টি গোচর হয়েছে। প্রকাশিত সংবাদটি সম্পূর্ন মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।
সংবাদটিতে যে দলিলটির কথা বলা হয়, সাব-রেজিস্ট্রার রাজারহাট নিবন্ধন আইন ১৯০৮ ও নিবন্ধন বিধিমালা ২০১৪ এর ভিত্তিতে এসএ (১৯৬২এর সার্ভে)গ্যাজেট ভূক্ত মৌজাঃচাকির পশার পাঠক পাড়া এর একটি হেবাবিল এওয়াজ দলিল নিবন্ধনের নিমিত্ত গ্রহন করেন। হেবাবিল এওয়াজ দলিল মুলতঃ পূর্ববর্তী দলিলের তফসিল অনুসরণ করে হয়ে থাকে, এবং এসএ রায়তির নামে অথবা নাম খারিজ হয়ে থাকলে সে মোতাবেক ভূমি উন্নয়ন কর দেয়া হয়ে থাকে,আর এস রেকর্ড যেখানে ধর্তব্যের বিষয় নয়। পক্ষগণ কর্তৃক সরবরাহকৃত কাগজপত্রাদির ভিত্তিতেই মুলতঃ নিবন্ধন আইন ও বিধিমালা অনুসরণপূর্বক দলিলটি নিবন্ধনের জন্য গৃহিত হয়। উল্লখ্য, কোন দলিল এর বৈধতার সহিত সাব-রেজিস্ট্রার সম্পৃক্ত নন(দ্রঃ নিবন্ধন আইন ১৯০৮ এর ধারা ৮৬, নিবন্ধন বিধিমালা,২০১৪ এর বিধি ৪২)। কারণ দলিলের পক্ষগন তাদের সরবরাহকৃত কাগজ সঠিক মর্মে কোয়াসি জুডিশিয়াল অফিসার হিসেবে সাব-রেজিস্ট্রার এর নিকট মহামান্য রাষ্ট্রপতির ১৯৭২ সনের ১৪২ নং আদেশ, ১৯০৮ সনের রেজিস্ট্রেশন আইনের ধারা ৫২ এবং ১৮৮২ সালের সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৫৩ ধারা অনুযায়ি ২০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে একটি হলফনামা বা অঙ্গীকার পত্র দাখিল করেন, যেখানে দলিলের তফসিল ভূক্ত জমির উপর দলিলের দাতার নিরঙ্কুশ মালিকানা এর ব্যপারে একটি ঘোষণা অন্তর্ভূক্ত থাকে। কাগজপত্রে কোন ত্রুটি বা জাল জালিয়াত ও অসঙ্গতির দায়ভার পক্ষগণের উপর বর্তায়। সাব-রেজিস্ট্রারের উপর নয়।
অভিযোগে উল্লেক্ষিত দলিলের তফসিল ভূক্ত জমিটি নিয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল থাকায় এবং সাব-রেজিস্ট্রার রাজারহাট এর নিকট “জনৈক হাজেরা খাতুন” দলিল লেখকের যোগসাজশ নিয়ে অভিযোগ করলে অভিযোগের প্রেক্ষিতে সাব-রেজিস্ট্রার তাকে বিধি অনুযায়ি দেওয়ানি আদালতে যাওয়ার পরামর্শ প্রদান করেন ও দলিল লেখকের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায় বিষয়ে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে জেলা রেজিস্ট্রার কুড়িগ্রাম তার দলিল লেখক সনদ স্থগিত করেন।
পরবর্তীতে ইউএনও রাজারহাট মহোদয়ের নিকট একই মহিলা হাজেরা খাতুন সাব-রেজিস্ট্রার রাজারহাট এর যোগসাজশে ”২০১৩/২০ কবলা দলিল নিবন্ধন” শিরোনামে অভিযোগ করেন। অভিযোগের শিরোনামটিই ছিলো ভুল এবং অভিযোগপত্রের গর্ভে বিভিন্ন ভুল তথ্যের সন্নিবেশ লক্ষ্য করা যায়। দলিলটি মুলতঃ ছিল একটি “হেবাবিল এওয়াজ বা দান পত্র দলিল” কবলা দলিল নয়, অভিযোগে রাজস্ব ফাঁকির কথা বলা হয়, কিন্ত বাস্তবে দলিলটি ছিলো “ডিউলি স্ট্যাম্পড” এবং সকল রাজস্ব নির্ধারিত সরকারি হেডে আদায় করা। অভিযোগকারী ইউএনও মহোদয়কে দলিল বাতিলের অনুরোধ করেন ইউএনও মহোদয় এসংক্রান্ত নোটিশ সাব-রেজিস্ট্রার রাজারহাট কে দেন। সাব-রেজিস্ট্রার রাজারহাট বিষয়টি অবগত হয়ে ও অভিযোগের কাগজপত্রাদি বিবেচনাপূর্বক তার উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট শুনানিতে অংশগ্রহণের বিষয়ে মতামত চাইলে নিবন্ধন অধিদপ্তর হতে ইউএনও মহোদয়ের শুনানিতে সাব-রেজিস্ট্রারকে অংশগ্রহণ হতে বিরত থাকতে বলা হয়, কারণ দলিল বাতিল বা শুদ্ধতার বিষয়ে নিরঙ্কুশ সিদ্ধান্ত দেয়ার এখতিয়ার রাখেন একমাত্র বিজ্ঞ দেওয়ানি আদালত। সুতরাং উপরোল্লিখিত বক্তব্যে বিষয়টি আইনের আলোকে পরিস্কার ও মীমাংসিত।
এছাড়াও স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যানের বিষয়ে যা বলা হয়েছে তা সঠিক নয়। তিনি দালিলিক ব্যাপারে লিখিত কোন অভিযোগ পাঠাননি। তিনি জনপ্রতিনিধি এবং সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়, রাজারহাট এর দলিল লেখক সমিতির উপদেষ্টা, তার পরিচয়ে সমিতির পদধারী গুটিকতক অসাধু দলিল লেখক বিভিন্নভাবে জনগনকে হয়রানি করে বেশি টাকা আদায়,স্থানীয় প্রভাব ব্যবহার ও জাল কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত ও সংশ্লিষ্ট বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এসকল দলিল লেখকদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহন প্রক্রিয়াধীন। এছাড়াও পূর্বে বিভিন্ন অসাধু কর্মকান্ডের জন্য কতিপয় অসাধু দলিল লেখকদের বিভিন্ন মেয়াদে বহিস্কার ও করা হয়েছে। এহেন সংস্কৃতি রাতারাতি পরিবর্তনের সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে জনগনের মাঝে ভূমি হস্তান্তর বিষয়ক সচেতনতাও প্রয়োজন।
বর্তমান সাব-রেজিস্ট্রার প্রকৃতপক্ষে নিবন্ধন প্রক্রিয়া মুলতঃ “নিবন্ধন আইন ১৯০৮ “, “নিবন্ধন বিধিমালা ২০১৪” এবং সময়ে সময়ে মাননীয় আইজিআর মহোদয় কর্তৃক জারীকৃত বিভিন্ন নির্দেশাবলী সম্বলিত নিবন্ধন ম্যানুয়াল অনুসরণ করে হয়ে থাকে । সাব-রেজিস্ট্রার উপরোক্ত আইন ও বিধিমালার আলোকে দলিল দাখিলকারি কর্তৃক সরবরাহকৃত কাগজ পত্রাদির ভিত্তিতেই দলিল নিবন্ধন করে থাকেন । এক্ষেত্রে দলিল সংক্রান্ত পক্ষগণকে দলিল লেখার ব্যপারে সংশ্লিষ্ট অফিসে সরকারি সনদ প্রাপ্ত ও নিবন্ধিত দলিল লেখকগন সরকার নির্ধারিত ফি এর বিনিময়ে দলিল প্রস্তুতে সহযোগিতা করে থাকেন।
প্রকৃতপক্ষে কতিপয় সাংবাদিক পরিচয়ধারী ব্যক্তি কোন স্বার্থান্বেষী মহল কর্তৃক প্ররোচিত হয়ে সাব-রেজিস্ট্রার রাজারহাট এর বিরুদ্ধে বানোয়াট ও ভুল তথ্য সরবরাহ করে একটি ভুয়া রিপোর্ট করিয়েছেন। আমি উক্ত সংবাদের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ভবিষ্যতে এধরণের বিভ্রান্তিকর সংবাদ পরিবেশন থেকে বিরত থাকার আহবান জানাচ্ছি।
প্রতিবাদে
মোঃ রায়হান হাবীব
সাব-রেজিস্ট্রার
রাজারহাট,কুড়িগ্রাম।
Leave a Reply