স্টাফ রিপোর্টার : সংবাদ প্রকাশের জেরে অবশেষে পুলিশের খাঁচায় ধরা পড়লো সাতক্ষীরার আলোচিত ইভটিজার ও কিশোর গ্যাং এর হোতা সোহাগ। সোহাগ হোসেন শহরের সুলতানপুর বড় বাজার এলাকার আব্দুল গফ্ফারের ছেলে। সাতক্ষীরা সদর থানার এসআই দেব কুমার দাশ’র নেতৃত্বে ২৪ জুলাই দিনগত রাতে ইভটিজার ও কিশোর গ্যাং এর হোতা সোহাগকে চালতেতলার ভাড়াবাড়ি থেকে আটক করে পুলিশ।
সূত্রে জানা গেছে, সোহাগের নেতৃত্বে শহরের বিভিন্ন এলাকার উর্তি বয়সি কিশোর ও যুবকের একটি চক্র বিকাল হলেই বিভিন্ন মডেলের মোটরসাইকেল নিয়ে শহরের বিভিন্ন স্থানে ও শহরের বাইরে সড়কে দাপিয়ে বেড়াতো এবং ইভটিজিংসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে বেড়াতো।
সোহাগ গ্যাং এর অন্যতম সদস্য হচ্ছে রিপন হোসেন ওরফে টাওয়ার রিপন, আলামিন, আরিফ হোসেন, রাজন, জুবায়ের, বাশার, কালাম, ইমরান, রাহাত, রনি, শাহীন, তুহিন সহআরো অনেকে। তাদের বেশিরভাগই সুলতানপুর, চালতেতলা, বাটকে খালি সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। মাদক সেবন, চাঁদাবাজি, নারীদের উত্ত্যক্ত করা, চোরাকারবারি সহ নানা অপকর্মের কর্মকাণ্ডে জড়িত।
গত ইং ১৬ জুলাই সোহাগ ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী সাতক্ষীরার দহাকুলা মোড়ে ভাড়াটিয়া শহিদুল ইসলাম ও তার বোন কাজের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার সময় ভ্যানে রাস্তার উপরে উঠলে, শহিদুলের বোনকে দেখে তারা বিভিন্ন নোংরামি কথা বলে এবং এক পর্যায়ে তার হাত ধরে টানাটানি করে। এতে শহিদুল ইসলাম প্রতিবাদ করে। সোহাগের সন্ত্রাসী বাহিনী তাদের হাতে থাকা লোহার রড, জিআই পাইপ ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়িভাবে শহিদুল কে মারতে থাকে।
অবস্থা বেগতিক দেখে দহাকুলার স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সোহাগ বাহিনী ফোন দিলে তাদের বাহিনীর আরো কিছু লোক পিকআপ ভরে এনে দহাকুলা মোড়ে মহড়া দেয় এবং গ্রামবাসীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে।
এসময় স্থানীয় এক ইউপি সদস্য গ্রামবাসীকে শান্ত করে এবং সোহাগ বাহিনীকে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করে। তারা ইউপি সদস্যের কথা না শুনে তাকেও হেনস্থা করে। তারা যাকে সামনে পায় তাকে বেদম ভাবে মারতে থাকে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ৯৯৯ তে ফোন দিলে পুলিশ আসলে সোহাগ বাহিনী দ্রুত পালিয়ে যায়।
সদর থানা পুলিশ আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যায়, আহতরা তাদের চিকিৎসা নিয়ে ফিরে এসে সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে সোহাগ বাহিনী।
গত ইং ১৯ জুলাই ট্রলি চালক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ নামের জৈনক ব্যক্তি কাজ করতে যাওয়ার সময় উক্ত সোহাগ বাহিনী তাকেও এলোপাতাড়িভাবে মারতে থাকে এবং বলে যে আমরা ইভটিজিং করি আর যাই করি তুই বাধা দেয়ার কে? অবস্থা বেগতিক দেখে স্থানীয়রা আব্দুল্লাহ কে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।
এতেও সোহাগ বাহিনী ক্ষান্ত হয়নি গত ২০জুলাই বিকাল ৫টার দিকে দহাকুলার বাসিন্দা আবু সহিদ পাপ্পু সাতক্ষীরা থেকে দহাকুলা যাওয়ার পথে সুলতানপুর ওয়াল্ড ভিশন মোড় এলাকায় পৌঁছালে উৎপেতে থাকা ইভটিজার সোহাগ বাহিনী আবু সাঈদ পাপ্পুর মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে তাকে মোটরসাইকেল থেকে নামিয়ে লোহাররড, জিআই পাইপ দিয়ে এলোপাতাড়ি মারপিট করে গুরুত্বর আহত করে।
এসময় পাপ্পুর ব্যবহৃত মোটরসাইকেল টি ও ভাংচুর করে ওই সন্ত্রাসী বাহিনী। আহতের ডাক চিৎকারে স্থানীয় লোকজন ছুটে আসার আগেই সন্ত্রাসীরা পাপ্পুর কাছে থাকা নগদ ৩০হাজার টাকা ছিনিয়ে ঘটনাস্থ থেকে পালিয়ে যায়।
এদিকে, সাতক্ষীরার ইভটিজার কিশোর গ্যাং সোহাগ বেপরোয়া, রুখবে কে? শিরোনামে রবিবার অনলাইন নিউজ পোর্টাল সাতক্ষীরা টাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকম সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে ওই কিশোর গ্যাং এর বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ হলে সদর থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ওই রাতেই সোহাগ কে আটক করে।
এব্যাপারে আটক হওয়া সোহাগ হোসেনসহ ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ১০/১২ জন কে আসামী করে সাতক্ষীরা সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যান দমন আইনে একটি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। (মামলা নং-৫৯) জিআর নং-৫১০/২১ সাতক্ষীরা)।
Leave a Reply