মোঃ আবু নাসির ডিটু, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, আশিয়ানা হাউজিং লিমিটেড, ঢাকা থেকেঃ
বিশ্বামিত্র কঠোর সাধনায় রপ্ত হলে দেবরাজ ইন্দ্র ভীত হলেন। বিশ্বামিত্র না আবার স্বর্গ রাজ্য কেড়ে নেন তার কাছ থেকে। তাই সাধনা ভঙ্গের জন্য পাঠালেন অপ্সরা মেনকাকে। মেনকা তার রূপ, রস, গন্ধ, কলা নিয়ে এলেন। ধ্যানরত ঋষির পাশে মেনকা শুরু করলেন কামনা মদির নৃত্য ও সঙ্গীত, কাম শৃঙ্গার। একদিকে দেবরাজ ইন্দ্রের চক্রান্ত। অন্যদিকে কামনার মেনকা, মোহিনী সঙ্গীত, মোহনীয় নৃত্য; আর কাম দেবতার ফুলশর।
বিশ্বামিত্রের ধ্যান ভাঙ্গে না। মেনকাও হাল ছাড়েন না। বরফ গলল। আগুন দাউদাউ করল। কামশাস্ত্রের সকল কলা নৈপুণ্য মেনকা প্রয়োগ করলেন। এক সময় বিশ্বামিত্র পুরোদমে ঋষি থেকে কামনাতুর প্রেমিক হয়ে গেলেন। বিশ্বামিত্র ও মেনকার মিলনে শকুন্তলার জন্ম হল। বিশ্বামিত্র দায়িত্ব না নিয়ে চলে গেলেন সাধনা ভঙ্গের যন্ত্রণা নিয়ে। অপ্সরা মেনকাও চলে গেলেন শকুন্তলাকে বনে ফেলে।
এত গেল পৌরানিক কাহিনী! মহাত্না গান্ধীজিও নাকি তার চরিত্রের দৃড়তা যাচাই করতে দুজন সুন্দরী অষ্টাদশী নগ্ন তরুনী নিয়ে ঘুমাতেন। যে কতক্ষণ তিনি কামকে কঠোর অনুশাসনে রাখতে পারেন। মানুষ বলে মহাত্নাজী পেরেছিলেন! তাই বলে সবাই পারবে তা তো নয়!
বর্তমানে ফেসবুক বাজারে হটকেক পরীমনি ইস্যু। শুনেছি তার মধুশালায় দেশের সব ধনাঢ্যকূলরা গড়াগড়ি খেতেন। দূর্জনেরা বলে একরাত পরীমণির রূপ সাগরে ভাসতে নাকি সরকারী কর্মকর্তাদের এক বছরের বেতনেও কুলাবে না। তাহলে সে আসরের আশিক কারা হতেন! জানতে বড়ই মন চায়!
গুরুজনেরা বলেন পঁচা শামুকে পা কাটলে নাকি গ্যাংগ্রিন হয়। এডিসি সাকলায়েন কি সেই পঁচা শামুকেই পা দিলেন! ৭/৮ বছর ধরে চিনি সাকলায়েন সাহেবকে। অসম্ভব বিনয়ী আর মেধাবী। দেখা হলেই সালাম দিয়ে বলতেন বড় ভাই কেমন আছেন? আমি ঠাট্টা করে বলতাম আপনি একদিন আইজি হবেন! বলতাম কারন তার যোগ্যতার বিষয়টি আমি অবগত ছিলাম। অসংখ্য জটিল মামলার রহস্য উৎঘাটনকারী সাকলায়েন রাজশাহী বোর্ডের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক ডাবল স্ট্যান্ড করা ছাত্র। উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পর সেনাবাহিনীর কমিশন র্যাংক সেকেন্ড লেফটেন্যান্টে যোগ দিয়ে দুই বছর সফলভাবে লং কোর্স সম্পন্ন করেন। সেখান থেকে চাকরী ছেড়ে দিয়ে ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। লোক প্রশাসনে অনার্স, মাস্টার্সে দুটোতেই ফাস্ট ক্লাশ পান। তারপর বিসিএস এডমিন ক্যাডারে যোগদান করেন। সেটা ছেড়ে দিয়ে আবার বিসিএস পুলিশে যোগদান করেন। ৩০তম বিসিএসে পুলিশে প্রথম স্থান অধিকারী সাকলায়েন ঈর্ষানীয় মেধার অধিকারী। তার স্ত্রীও এডমিন ক্যাডারে। এক সফল মেধাবী দম্পত্তি তারা। বেশ কয়েক বছর আগে একদিন গল্প করার সময় বলছিল বড় ভাই ২/৩ লাখ টাকায় পুরানো একটি গাড়ী কিস্তিতে কেনার দরকার। বউ ঝিনাইদের একটি উপজেলার ইউএনও। প্রায় যেতে হয়। পুরানো একটি গাড়ী হলে ভালো হত। ছোট্ট ফুটফুটে একটি বাচ্চা তাদের। বছর খানেক আগে শুনেছিলাম তার স্ত্রীর ক্যান্সার। খুব কষ্ট পেয়েছিলাম।
আজ সারা দেশে টক অব দ্যা টাউন সাকলায়েন ইস্যু। পরীমণির ডেরায় ঢুঁ মারার মত অর্থশালী সে নয়। আবার জোর করেও পরীমণির ডেরায় তো ঢুকেনি। পঁচা শামুকে পা কেঁটে এক উজ্জ্বল সম্ভবনাময় মেধাবী তরুণের ক্যারিয়ার চরম হুমকির মুখে! যেখানে দেশের সব ধনাঢ্য কালো টাকার রাঘব বোয়ালদের নিত্য আনাগুনা সেখানে তার মত একজন জুনিয়র অফিসার তো নস্যি। তারপরও সে সব রাঘব বোয়ালরা পর্দার অন্তরালেই রয়ে গেল। মাঝখান থেকে বলির পাঠা হলো সাকলায়েন।
জ্বলন্ত আগুনের কাছে মোমবাতি কতক্ষন না গলে থাকতে পারে? পরীমণিদের ডেরায় ঢু মারা সব আশিকদের নাম ঠিকানা প্রকাশ করা হোক।
সাকলায়েনের জন্য সহমর্মিতা। যে ভুলে সে কক্ষচ্যূত হয়েছে তা থেকে আবার সুন্দর জীবনে ফিরে আসুক সেই কামনা রইলো!
Leave a Reply