ডেস্ক রির্পোটঃ কলারোয়া উপজেলা যুদ্ধকালীন কমান্ডার এবং মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের অকুতোভয় সৈনিক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোসলেম উদ্দিনের তৃতীয় মৃত্যু বার্ষিকীতে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।
মহান এই বীর সৈনিকের জানাজা থেকে শুরু করে প্রতিটা মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে আমার থাকার সৌভাগ্য হয়েছিলো এবং ঐ সকল অনুষ্ঠানে তার বর্ণাঢ্য কর্মময় ও রাজনৈতিক জীবনের কিছু স্মৃতিচারণ করারও সৌভাগ্য হয়েছিলো। যারা আমাকে এই সুযোগ দিয়েছিলো তাদের কাছে আমি চির কৃতজ্ঞ। কারণ জাতির এই মহানায়করা লড়াই করে সংগ্রাম করে জীবন দিয়ে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলো বলেই আমি জন্মেছিলাম বাঙালি বা বাংলাদেশি হিসেবে। যেটি আমার অস্তিত্ব এবং গর্ব। তাই আমার মতো নগণ্য এই অধম পৃথিবীর যে দেশেই যায় মাথা উঁচু করে বলতে পারি আমি বাঙালি, আমি বাংলাদেশী। আমাকে রোহিঙ্গা বা কোন উদবাস্ত রিফিউজদের মত নতজানু হতে হয় না। স্বাধীনতা উত্তর পৃথিবীর প্রতিটা দেশেই তাই এই সকল বীর সৈনিকদেরকে সর্বোচ্চ সম্মানে সম্মানিত করা হয় এবং ঐ সকল জাতি প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম তাদের আদর্শে আদর্শিত হয়। যার আর এক নাম দেশ প্রেমিক।
কিন্তু যে সকল জাতি এটাকে উপেক্ষা করেছে তারা তাদের স্বাধীনতা রক্ষা করে রাখতে পারে নাই। এমনকি ধ্বংস হয়েছে। লিবিয়া, ইরাক এবং সিকিম তার বাস্তব উদাহরণ।
২০২২ সালে কমান্ডার মোসলেম উদ্দিন এর প্রথম মৃত্যু বার্ষিকী অনুষ্ঠানে কলারোয়া পাবলিক ইনস্টিটিউট অডিটোরিয়ামে আমি উপস্থিত হয়ে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম। স্টেজের সামনে অধিকাংশ চেয়ার সেদিন খালি ছিলো। স্টেজেও অনুপস্থিত ছিলেন কলারোয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতা এবং যুদ্ধকালীন মোসলেম উদ্দিন কমান্ডারের কিছু সঙ্গীরাও। কেন কি কারণে অনুপস্থিত ছিলেন তারা সেটি আমার কাছে কোন দালিলিক প্রমান নাই। তবে আমার ধারণা রাজনৈতিক গ্রুপিং এর কারণে হতে পারে! যা পৃথিবীর প্রত্যেক দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের মধ্য হয়ে থাকে। কিন্তু মৃত বীর সৈনিককে নিয়ে রাজনৈতিক গ্রুপিং হওয়ার কথা নয় বা বড়ই বে-মানান। এই প্রসঙ্গে যদি আমরা লক্ষ্য করি পার্শ্ববর্তী যশোরের অবিসংবাদিত দুই রাজনৈতিক ব্যক্তি তরিকুল ইসলাম এবং আলী রেজা রাজু। যারা ব্রিটিশ আমল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত একই মেরুতে রাজনীতি করেছে। কিন্তু১৯৯৬ সালে তরিকুল ইসলাম এবং আলী রেজা রাজু দুইজন দুই মেরুতে অবস্থান নিয়ে আমৃত্য পর্যন্ত জাতীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তাদের মধ্য প্রথম মৃত্যুবরণ করেন তৎকালীন ষশোর জেলা আওয়ামীলীগের সংগ্রামী সভাপতি ও সংসদ সদস্য আলী রেজা। রাজু’র মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে তরিকুল ইসলাম সেদিন রাজু ভাইয়ের মাথার কাছে দাঁড়িয়ে যেভাবে কেঁদেছিলো, আজও আমি সেই দৃশ্য, সেই অনুভূতি এবং মানবতার নিদর্শন ভুলতে পারিনা। সেদিন এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের কাছ থেকে আমি শিখেছিলাম রাজনীতির আর এক অর্থ মানবতা। যে মানবতার সঠিক অর্থ করেছেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার,গীতিকার এবং শিল্পী ডক্টর ভূপেন হাজারি। মানুষ মানুষের জন্য জীবন জীবনের জন্য
উপস্থাপক যখন আমাকে বক্তব্য দেওয়ার জন্য আহ্বান করলেন আমি হতভাগ হয়ে গিয়েছিলাম। এমন মহান ব্যক্তির স্মৃতিচারণ করার সৌভাগ্যর জন্য। কিন্তু আমার মত অগ্রহনীয় বক্তা যখন বক্তব্য দিতে যায় তখন যা ঘটার তাই ঘটেছিলো। সেদিন ঐ অনুষ্ঠানে যারা আসে নাই তাদেরকে আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক চেতনার বাহিরে গিয়ে খন্দকার মুস্তাকের তথাকথিত আওয়ামীলীগের রাজনীতি করছে বলে অরাজনৈতিক ভাষা ব্যবহার করেছিলাম। যারা ফিরোজ আহম্মেদ স্বপনের নেতৃত্ব ও সভাপতিত্বর বাহিরে আওয়ামীলীগ করতে চাই। অনুষ্ঠানে শুধু মাত্র কলারোয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের কিছু নেতা নয়। বিভিন্ন ইউনিয়নের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরাও অনুপস্থিত ছিলেন। অনুপস্থিতির তালিকায় একেবারেই শূন্য ছিলো চন্দনপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের নেতৃত্ব পর্যায়ের সকলেই। তবে আমার ঐ সু-রতিহীন অগোছালো বক্তব্যর মধ্য দিয়ে চন্দনপুরের শূন্যতা সেদিন হয়তো কেটেছিলো। অগোছালো এবং অজ্ঞতার কারণে আমার ওই ভুল বক্তব্যের জন্য আমি নিঃশর্ত পদশ্রীময় ক্ষমা চাচ্ছি। কারণ প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে আমি যে অরাজনৈতিক চর্চা এবং আমার মূর্খতার পরিচয় দিয়েছিলাম তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী অর্থাৎ তার ঠিক দুই বছর পরে আজ দেখলাম সম্পূর্ণ বিপরীত। যেখানে প্রায় সকলেই উপস্থিত আছে। সকলের মধ্যই একত্মতাই ভরে উঠেছে। একে অন্যের প্রতি আছে শ্রদ্ধা ভালোবাসা উচ্ছ্বাস এবং অনুভূতি। সকলেই যেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শে আদর্শিত হয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার পরীক্ষিত সৈনিক ফিরোজ আহমেদ স্বপনের ছায়া তলে একট্রা। যার নাম স্বাধীনতা। যার নাম বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ।।
তবে ছিলাম না আমি! কারণ সকলের ভিড়ে হারিয়ে গিয়েছি আমি! কিংবা সৌভাগ্য হয়নি!
তারপরেও আনন্দ এবং উচ্ছেসিত হয়েছি সকলের মধ্য একত্বতা ও ভালোবাসায় আবদ্ধিত হওয়ার জন্য।
Because love brings happiness in the world.
কলারোয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের এই ঐক্যবদ্ধতা শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের জন্যই সুখবর নয়। দেশ জাতি এবং স্বাধীনতা পরবর্তী উন্নয়নের বহূ কিছু থেকে বঞ্চিত কলারোয়ার জন্যও খুবই প্রয়োজন। যে উন্নয়ন কলারোয়াবাসীর জন্য অপেক্ষা করছে।
তবে তৃতীয় এই মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের জন্য আমার একটি দুঃখ আছে। সেটি হলো দ্বিতীয় মৃত্যু বার্ষিকীতে গত বছর আলোচনা সভায় আমি আমার বক্তব্যই কলারোয়া পাইলট হাইস্কুলের মোড় থেকে কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোসলেম উদ্দিন এর বাড়ির পাশ দিয়ে রাস্তাটি তার নামে নামকরণ করার প্রস্তাব করেছিলাম। সেই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি তৎকালীন সংসদ সদস্য এডভোকেট মোস্তফা লুৎফুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন। প্রধান অতিথি সহ তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুলি বিশ্বাস এবং কলারোয়া পৌরসভার মেয়র মহোদয়ের কাছে আমার সেই প্রস্তাব বা দাবি উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং তৎকালীন সংসদ সদস্য সংশ্লিষ্ট রাস্তাটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোসলেম উদ্দিন এর নামে নাম ফলক সহ এক মাসের মধ্যে উদ্বোধনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার পরও কোন অদৃশ্য কারণে ওই রাস্তাটি এক বছরের মধ্যেও উদ্বোধন করা হয় নাই সেটি আমার বোধগম্য নয়। এজন্য ভেবেছিলাম আজকের এই মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে জোরালো ভাবে সেটির বিষয়ে কথা উঠানো হবে। উদ্বোধনের তারিখও ঘোষণা করা হবে। অথচ সকলের একাত্মতা, আনন্দ এবং বক্তব্যর মধ্য দিয়ে তৃতীয় মৃত্যু বার্ষিকী শেষ হলো।এ ভাবেই আমরা ভুলে গেলে পরবর্তী প্রজন্ম কিভাবে জানবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং বীর সৈনিকদের জীবনী ?
ঠিক এমনই একটি ঘটনা চন্দনপুর ইউনিয়নের কাঁতপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষক সুরত আলী। যার বাড়ি থেকে চান্দুড়িয়া-কলারোয়ার পাকা রাস্তা ৫০০ থেকে ৬০০ মিটার দূরে। ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তালা- কলারোয়া আসনে ইঞ্জিনিয়ার মুজিবুর রহমান যখন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন ঐ রাস্তাটি ইঞ্জিনিয়ার মজিবুর রহমান করার জন্য নিজে নামকরণ করেছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সুরত আলী সড়ক। পরবর্তীতে রাস্তার প্রায় ২০০ মিটার ইটের সলিং বসানোর পর কোন এক অদৃশ্য কারণে আজও সেই রাস্তাটি আর কোন কাজই হয়নি। ইতিমধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা সুরত আলীর গ্রামে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা পাকা করন হয়েছে। কিন্তু গত ১৬ বছরের মধ্যেও কোন অদৃশ্য কারণে ঐ রাস্তাটির আর কোন কাজই হয়নি। সারাদেশে যখন ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরিত করার জন্য হাজার হাজার কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে, মহাসড়ক সহ গ্রামীণ জনপদের রাস্তাঘাট গুলো পাকা করন হচ্ছে, তখন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা সুরত আলীর বাড়ি থেকে পাকা রাস্তায় উঠতে কোন ভ্যানও চলতে পারে না। জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের জন্য আমরা যদি কিছু করে না যেতে পারি তাহলে তাদের নাম যে ইতিহাস থেকে মুছে যাবে সেটি নিঃসন্দেহে বলা যায়। কারণ স্বাধীনতার নেত্রীত্ব দানকারী আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় থাকতে যদি এই সকল বীর সৈনিকদের নাম রক্ষা না করতে পারি তাহলে নিশ্চয় তৃতীয় গ্রহের কেউ এসে এই নাম গুলো ব্যবহার করবে না।
এভাবে আমাদের এই ভুলে যাওয়াকে আমি ব্যর্থতা ও লজ্জিত অনুভব করি। আপনারা কি কেউ লজ্জিত বা অনুভব করেন?
ভুল ধরা বা পরামর্শ দেওয়ার যোগ্য আমি নই। কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোসলেম উদ্দিন এর তৃতীয় মৃত্যু বার্ষিকীর আজকের আমার এই না পাওয়ার বেদনা বা অনুভূতি নির্দিষ্ট কাউকে ভুল ধরা বা জবাব নেওয়া কিংবা প্রতিপক্ষ হিসাবে নয়। আমার এই ভাবনা এবং লেখা সম্পূর্ণ আমার নিজস্ব চিন্তাধারা এবং অনুভূতি থেকে প্রতিফলিত। তারপরও যদি কারোর সাথে এগুলোর মিল হয়ে যায় তাহলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
সর্বশেষ সাতক্ষীরা-১ তালা- কলারোয়া এবং পাটকেলঘাটা থেকে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব ফিরোজ আহমেদ স্বপন। আপনি মহান স্বাধীনতা রক্ষাকারী এ প্রজন্মের সুলতান। হাজার ফুলের মধ্য থেকে একদম শেষ মুহূর্তের নির্নায়িত বহু পরীক্ষিত এবং সঠিক সিদ্ধান্ত বেছে নেওয়ার একমাত্র মহিয়সী নারী। যে ধরনের সঠিক সিদ্ধান্ত ISO কিংবা Android এখন উদ্ভাবন করতে পারে নাই। যেটি শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাই বারবার সারা বিশ্বকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে। সেই শেখ হাসিনাই শেষ মুহূর্তে আপনাকে নির্নয় করেছিলো। শুধু বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন নয়। বাংলাদেশের সকল মিডিয়া সহ পৃথিবীর মিডিয়া গুলো সেদিন ৪০ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়েছিলো। শুধুমাত্র সাতক্ষীরা -১ আসনে কে প্রার্থী হচ্ছে।
শেষ মুহূর্তের সেই নামটি ছিল ফিরোজ আহমেদ স্বপন। ডিসেম্বরের সেই কুয়াশাছন্ন সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে প্রচারিত নামটি ঘোষণার সাথে সাথে আনন্দ এবং অনুভূতি প্রকাশে শুধু আপনি নিজেই চোখের জল ফেলিন নাই। একই সাথে আনন্দ অশ্রুর জলে তালা-কলারোয়ার ১০ লক্ষ মানুষ কেঁদেছিলো। ফলে এই জনপদের মানুষের আশাও আপনার কাছে এভারেস্টের মত। এজন্য আগামী ১৬ ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের দিন যুদ্ধকালীন কলারোয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোসলেম উদ্দিনের নামের রাস্তাটি উদ্বোধন করার জন্য আকুল আবেদন জানাচ্ছি। একই সাথে আপনার নির্বাচনী এলাকায় যতগুলো বীর মুক্তিযোদ্ধা আছে তাদের প্রত্যেকের নামে তাদের নিজ নিজ গ্রামে কোন প্রতিষ্ঠান বা রাস্তা ঘাট গুলো পর্যায়ক্রমে ঐ সকল বীর সৈনিকদের নামে নামকরণ করা হোক।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ হোক। যে বাংলাদেশ রক্ষা করবো আমারা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম।
জয় বাংলা।।
লেখক: মশিউর রহমান। বিশিষ্ট্য ব্যবসায়ী ও সমাজ সেবক।
সদস্য- কলারোয়া প্রেস ক্লাব ও কলারোয়া পাবলিক ইনস্টিটিউট এবং সত্বাধিকারী-
অথৈ ইন্টারন্যাশনাল।
Leave a Reply