আজিজুল ইসলাম, খুলনা জেলা প্রতিনিধি।
রূপসার জাবুসা গ্রামে গুফিয়ার খালে পানি আসতে না দেওয়ার ফলে, প্রায় ৬৫০ একর ফসলি ক্ষেত এখন মরুভুমিতে পরিণত। যার ফলে কৃষকরা দুশ্চিন্তায়! এ বছরে ধান ফলাতে পারব কি-না?
সরোজমিন ঘুরে দেখা গেছে,
রূপসার নৈহাটী ইউনিয়নের জাবুসা গ্রামের বিল দুভাগে বিভক্ত। গ্রামের পশ্চিম বিলে পানিতে ভরপুর। এখানে পানি উঠানো বা নামানো কোন সমস্যাই নেই। একই গ্রামের পূর্ব বিলে পানি নেই; যেন মরুভূমি।
অথচ এ বিলেও একটি নদী রয়েছে। এই নদীটি মাছ চাষের জন্য এজারাকে কেন্দ্র করে, দু-গ্রুপের কোন্দোলের সমস্যার কারণে কৃষকের ভাগ্য এখন চিন্তায় পরিণত হয়েছে।
স্থানীয় কৃষকরা বলেন, একদল অসাধু নেতৃবৃন্দ সুইচগেট দিয়ে পানি নিস্কাশন করতে না দেওয়ার ফলে কৃষকরা ভোগান্তির মুখে পড়েছে। তারা বলেন, সময় মত পাতো ফেলে চারা তৈরি করতে না পারলে এ বছর আর ধানের ফলোণ সম্ভব হবে না। এ সময় বিলে ধান চারা বা পাতো থাকার কথা। অথচ পাতোই ফেলার মত পানি বিলের নদীতে আসতে দিল না। খাল এজারায় নেতাদের সমস্যার ভোগান্তির মুখে আমরা কৃষকরা। এ বিল দিয়ে প্রতি বছর ৪৫০ ম্যাটিক টন ধান উৎপাদন হয়ে থাকে। যার ফলে হাজারো কৃষক ধান চাষিরা স্বাচ্ছন্দভাবে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে এবং দেশের খাদ্য ঘাটতি পূরণের সাহায্য করে। এ বিল দিয়ে শুধু ধান উৎপাদন নয়, বরং তরি-তরকারি, চিংড়ি ও সাদা মাছ চাষে দেশের ব্যাপক আর্থিক সহায়তা পূরণ হয়ে থাকে। এ বছর বীজ ফেলবে কবে? আর পাতো তুলে ক্ষেতে লাগাবে কবে? দিন দিন ধান চাষের সময় শেষ হয়ে আসছে। এ সকল কৃষকরা যদি চাষাবাদ করতে না পারে, তাতে প্রায় হাজারও চাষি অনাহারে দিন-যাপন করতে হতে পারে। পাশাপাশি জমির মালিকরাও ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। পরিবার ও ছেলে-মেয়ে লেখা-পড়ার অর্থ জোগাড় করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। কৃষকরা বিভিন্ন ব্যাংক ও সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে এ চাষাবাদ করে থাকেন। ধান কাটা শেষে পরিশোধ করতে পারবে বলে। কৃষকের এ আশানীয় ঋণ মাটি হতে বসেছে। দুঃখের পরে কি সুখ আসবে? এ আশায় জাবুসা বিলের হাজারো কৃষক।
কৃষক বাঁচলে, দেশ বাঁচবে। প্রধান মন্ত্রীর এ শ্লোগান সঙ্গে নিয়ে স্খানীয় আওয়মীলীগ নেতা মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, বর্তমান সরকার কৃষি বান্ধব সরকার। এ সরকারের আমলে যারা কৃষি চাষাবাদে বাঁধা সৃষ্টি করছেন তাঁরা আওয়ামীলীগ সরকারের পক্ষের লোক হতে পারে না। তারা কৃষক বাঁচাতে চায় না, তারা দেশে খাদ্য ঘাটতি করে অর্থনীতিকে পঙ্গু করতে চায়।
জাবুসা বিল সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান বলেন, আমরা অচিরেই সুইচগেট ছেড়ে দিব। জাবুসা গ্রামে গুফিয়ার খালে পানি আসতে পারে এবং কৃষকরা যাতে ধান চাষসহ নানাবিধ ফসল ফলাতে পারে।
উপজেলা উপসহকারী কৃষি
কর্মকর্তা হেমাত্রী বিশ্বাস বলেন, জাবুসার এ বিলে প্রায় ৬৫০ একর ফসলি জমিতে নানাবিধ ফসল উৎপাদন হয়ে থাকে। এ বিলে বোরো ধান ১ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদন এবং আমন ধান ৪৫০ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়ে থাকে। এ সময় আমন ধান চাষাবাদের সিজিন চলছে, অথচ ফসলি কৃষি খেতে পানি নাই। যার ফলে ওই বিলের চাষিরা আমন ধানের বীজ ফেলতে পারেছে না। কৃষকদের মধ্যে হাইহুতাশ দিন দিন বাড়ছে।
গত ১২ জুলাই জাবুসা বিলের পরিস্থিতি দেখতে গেলে। এ সময় বেশ কিছু কৃষক ছুটে এসে তাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা জানান। এ সময় উপস্থিত কৃষকরা হলো (তিলক গ্রামের) বাবুর সেখ, ইসরাফিল সেখ, কুতুব উদ্দিন, বেল্লাল সেখ, খলিল সেখ, মিজান গোলদার, জয়নাল, উত্তম, মনির, মোসলেস, অরুন পাল।
(আমদাবাদ গ্রামের) সিদ্দিক সেখ, তানসেন সেখ, সালাম সেখ, আলমগির সেখ, নিজাম সেখ, ইকবল সেখ।
(ইলাইপুর গ্রামের) খায়রুল হালাদার, তাজুল ইসলাম ফকির, চান হাওলাদার, আল আমিন সেখ।
(জাবুসা গ্রামের) মাহাবুব সেখ, জাহিদুল, গফ্ফার বিহারি, বাশার সেখ, জাহিদুল, ইসলাম, মুলতান সেখ, রফিক সেখ, অহেদ সেখ, তাজুল।
(খাজুরা গ্রামের) আনোয়ার হাওলাদার, আলমগীর সেখ, রুপক সেখ, শফিজুল সেখ, মাহাবুব সেখ প্রমূখ।
Leave a Reply